শিরোনাম
স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেলের হাতে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু খুনের পেছনে দাম্পত্য কলহের বিষয়টি সামনে এলেও স্বজনরা এখনও জানেন না, কী নিয়ে তাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব ছিল। এমনকি হত্যাকাণ্ডের সময় ছেলে-মেয়েরা ওই বাসায় থাকলেও তারা কিছু টের পাননি। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিন রোড এলাকায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন ৪০ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী।
শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে তাদের ১৭ বছরের মেয়ে এবং ৫ বছরের ছেলে বাসাতেই ছিলেন। তবে তারা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কোনো কিছু টের পায়নি। ওটা নোবেলদের নিজেদের বাড়ি। নিজেদের থাকার ফ্ল্যাটটা তারা বড় করেই বানিয়েছিল। এ কারণে ছেলে-মেয়েদের ঘরগুলোও দূরে দূরে। ফলে তারা কিছু শুনতে পায়নি। নোবেল ছেলে-মেয়েদের বলেছিল তার মা সকালে শুটিংয়ের জন্য বেরিয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েরা সেই কথাই সবাইকে বলেছে।
শিমু-নোবেল দম্পত্তির সন্তানদের মধ্যে মেয়েটা বড়। সে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। আর ছোট জনের বয়স ৫ বছর।
পুলিশ বলছে, গত রোববার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে গ্রিন রোডের ফ্ল্যাটে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রী শিমুকে ‘গলা টিপে হত্যার’ কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তার স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল। হত্যার পর তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদের সহায়তা নিয়ে লাশ গুম করেছিলেন।
পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, গত রোববার সকাল ৭-৮টার দিকে হত্যার পর ফরহাদকে বাড়িতে ডেকে বাইরে থেকে ২টা বস্তা এনে শিমুর লাশ তাতে ভরে সেলাই করেন নোবেল। এরপর দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে হজরতপুরে সড়কের পাশে ফেলে আসেন।
মঙ্গলবার পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, রোববার সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর বন্ধু ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা আনেন। শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে ২টি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান।
প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় যান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোঁপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। পরদিন সোমবার (১৭ জানুয়ারি) কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিমুর স্বামী নোবেল।
গ্রেপ্তার নোবেল ও ফরহাদকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আগামীকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) তাদের রিমান্ডের শেষ দিন। এরপরই তাদেরকে আদালতে হাজির করা হবে।
শিমুর ভাই খোকন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের কথা জানতাম। শিমুকে নানাভাবে নির্যাতন করত নোবেল। কিন্তু কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তা জানি না।
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল কিছু বলেছে কি না। তারা (পুলিশ) বলেছে, নোবেল হত্যার কথা স্বীকার করলেও কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তা এখনও পরিষ্কার করে বলেনি।’
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রমজানুল হক বলেন, ‘কী নিয়ে তাদের দাম্পত্য কলহ তা এখনও সুনির্দিষ্ট নয়। পুলিশ কাজ করছে। পরবর্তীতে হয়তো বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে।’
গত সোমবার ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর সেতুর কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ পাওয়া যায়। পরে তা অভিনেত্রী শিমুর বলে শনাক্ত হয়। লাশ উদ্ধারের রাতেই নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর লাশ ফেলে দিয়ে আসার পরদিন সোমবার কলাবাগান থানায় স্ত্রী নিখোঁজের জিডি করেছিলেন তিনি।
তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, সোমবার শিমুর লাশ উদ্ধারের পর নোবেলের গাড়িতে পাওয়া সুতার সূত্র ধরে হত্যার সঙ্গে তার (নোবেল) সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। ওই সুতা দিয়েই লাশ মোড়ানো বস্তা সেলাই করা হয়েছিল।
শিমুর ভাই শহীদুল জানান, মঙ্গলবার রাতে গ্রিন রোডের বাসার সামনে জানাজা শেষে আজিমপুরে শিমুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার শিমুর আত্মার শান্তি কামনা করে এফডিসিতে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে বরগুনার আমতলীর মেয়ে শিমুর।
পরের বছরগুলোতে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের প্রায় ২৫ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে দেখা যায় তাকে। শাকিব খান, অমিত হাসানসহ কয়েকজন তারকার সঙ্গেও কাজ করেছেন।
শিমু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় এবং প্রযোজনাও করেছেন।
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে পরিচিতি পান শিমু। সেই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন অমিত হাসান।
সম্প্রতি এনটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ এ অভিনয় করে এই প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও পরিচিতি পেয়েছেন।
তার ফেইসবুক পেজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রডাকশন হাউজও চালাতেন এই অভিনেত্রী।
সূত্র: আরটিভি