শিরোনাম
আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে আয়োজিত ইসলামি মহাসম্মেলনে বক্তারা ভারতের মাওলানা সাদ কান্দলভী এবং তাঁর অনুসারীদের ইজতেমার সুযোগ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। মাওলানা সাদের কড়া সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, ‘মাওলানা সাদ মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষকদের বেতনকে নেওয়া বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর নির্দেশেই ২০১৮ সালে টঙ্গী ময়দানে তাবলীগের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদরাসার নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলীগী সাথী ভাইদের ওপর নৃশংস ও সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালানো হয়। সুতরাং তার মতো খুনির বাংলাদেশে আসার কোনোই অধিকার নেই।’
এর আগে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘কওমি মাদ্রাসা, ইজতেমা ও দ্বীন’ রক্ষার দাবিতে ‘ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ’র ব্যানারে মহাসম্মেলনের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো। লাখো মানুষ এ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ সকালে রাজধানীতে আসেন। তাদের বহন করা হাজারও বাস পার্কিং করা হয় সোহরাওয়ার্দীর আশপাশে। এতে তীব্র যানজটে নাকাল হন রাজধানীবাসী। শহীদ মিনার, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, শিক্ষা ভবন মোড় অবরুদ্ধ হয়ে যায় গাড়ির ভিড়ে।
সকাল আটটায় উলামা মাশায়েখ ব্যানারে মহাসমাবেশ শুরু হয়। হেফাজত আমির আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী। স্বাগত বক্তৃতা দেন মহাসম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক।
সাদের অনুসারীদের নকল বলে অ্যাখ্যা দেওয়া হয় সম্মেলন থেকে। বক্তারা বলেন, মানুষ কখনও নকল গ্রহণ করে না। নকল বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। তাই নকল ধারার তাবলীগ চলতে পারে না। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নকল তাবলীগ নানা সুবিধা নিয়েছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আশপাশেও ঘুরঘুর করছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
আল্লামা বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। এতে বলা হয়, দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবী-রাসুল, সাহাবায়ে কেরাম এবং শরয়ী মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যগুলো কুরআন-সুন্নাহবিরোধী, যা মেনে নেওয়া যায় না। অথচ মাওলানা সাদের সংশোধনকারী আলেমদেরকে দেওবন্দি, হেফাজতি, পাকিস্তানি রাজাকার বলছে, অথচ তারা নিজেরাই গোমরাহ। হযরত মাওলানা ইলিয়াছ রহ. বলে গেছেন, যদি তাবলীগ থেকে ইলম ও জিকির উঠে যায়, তাহলে দাওয়াতে তাবলীগের কাজে গোমরাহী ঢুকে যাবে।
সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। এতে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। বলা হয়, ৫ আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে মসজিদ মাদ্রাসা ও ধর্মীয় কার্যক্রমে নানাবিধ হয়রানি ও অযাচিত হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করছে। যা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয়াদি বাতিলের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে ধর্ম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে গণহত্যায় জড়িত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিচার করতে হবে। টঙ্গী ময়দানে তাবলীগের জোরে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না। ইজতেমার দুই পর্বই উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানেই করতে হবে। কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের সাদপন্থীদের কোনো কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। কাদিয়ানীদের অবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, আল্লামা আব্দুল হামিদ, মাওলানা শেখ আহমাদ, মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক, আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মুফতী জসিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।