শিরোনাম
২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হচ্ছে না পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সংশোধিত এডিপিতে বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বরাবর চাহিদাপত্রও দিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ন কবীর।
জানা গেছে, বর্তমান ও বাড়তি চাহিদাসহ সংশোধিত এডিপিতে পদ্মা সেতু রেল লিংকে ৬ হাজার ২৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। অথচ চলমান এই প্রকল্পে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে এতে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, পদ্মা সেতু সরকারের একটি ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প। সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ উন্নয়ন করা এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, এ প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা নতুন করে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হচ্ছে। এছাড়া ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল গণপরিবহন সুবিধার আওতাভুক্ত হবে। সরকার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সুফল দেওয়ার লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর চালুর দিন থেকেই রেল সংযোগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ন কবীর বলেন, ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনা মহামারি ও বন্যার কারণে বিভিন্ন নির্মাণকাজের সুষ্ঠু অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণকাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত ছিল। সেই সময়ে চীন থেকে ভাঙ্গা-মাওয়া অগ্রাধিকার সেকশনের জন্য রেল, ফিটিংস, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং, ব্রিজ গার্ডার ইত্যাদি পৌঁছানোর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা পৌঁছায়নি। ফলে সিডিউল মোতাবেক মালামালসমূহ সাইটে পৌঁছায়নি এবং নির্মাণকাজ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পাদিত হয়নি। কিন্তু করোনা মহামারির প্রকোপ হ্রাস পাওয়ার পর নির্মাণকাজের মালামাল পৌঁছায় এবং বর্তমানে নির্মাণকাজের অগ্রগতি ঊর্ধ্বমুখী।
রেল সচিব আরও বলেন, এখন এমব্যাংকমেন্ট প্রিপেয়ার্ড সাবগ্রেড, সাবব্যালাস্ট নির্মাণ, ভায়াডাক্টের পিয়ার নির্মাণ ও সেগমেন্টাল বক্সগার্ডার ইরেকশন, মেজর ব্রিজের পিয়ার এবার্টমেন্ট নির্মাণ, স্টিল গার্ডার ইরেকশন ও রং করা, কালভার্ট, আন্ডারপাস নির্মাণ, ব্যালাস্টলেস ও ব্যালাস্টটেড রেলওয়ে ট্র্যাক প্যানেল, স্ল্যাব নির্মাণ, স্টেশন ভবন নির্মাণ এবং রিভার ট্রেনিং ওয়ার্কের জন্য সিসি ব্লক তৈরির নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৩১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫১ কিলোমিটার এমব্যাংকমেন্ট, ৩১টি মেজর ব্রিজ, ৩৩টি কালভার্ট-আন্ডারপাস, দুইটি স্টেশন ভবন, ভায়াডাক্টের পাইল, পিয়ার, স্লিপার, ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক স্ল্যাব, রিভার ট্রেনিং ওয়ার্কের জন্য সিসি ব্লক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা-মাওয়া ৪৭, মাওয়া-ভাঙ্গা ৭৪ এবং ভাঙ্গা-যশোর সেকশনের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে রেলওয়ে স্থাপনা ও নির্মাণ খাতে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি দরকার। চলতি অর্থবছরে রেলওয়ে স্থাপনা ও নির্মাণ খাতে ১ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে ১ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে। রেলওয়ে স্থাপনা ও নির্মাণ খাতের ব্যয় নির্বাহসহ অন্যান্য বিল পরিশোধের জন্য সংশোধিত এডিপিতে ৬ হাজার ২৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের বিল বাবদ ১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা প্রয়োজন। সরকারি অংশের বাজেট না থাকায় এই বিলের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ আরও এগিয়ে নিতে ২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় হতে পারে।
ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সময়-ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ