শিরোনাম
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। এরমধ্যে শুরু বাসসহ সবধরনের গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা বলা হলেও পরে ‘যত আসন তত যাত্রী’ বহনের কথা জানানো হয়। তবে রাজধানীর বাসগুলোতে সেই নিয়ম মানাতো হচ্ছেই না, বরং অন্য সময়ের মতোই গাদাগাদি করেই চলাচল করছেন যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, চানখারপুল, গুলিস্তান, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহনে পূর্ণ আসনে যাত্রী নেওয়ার পর দাঁড়িয়ে আবার কোনও কোনও বাসে দরজায় ঝুলেও যাত্রীরা গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। আর নির্দেশনা মোতাবেক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেখা যায়নি অধিকাংশ পরিবহনেই। তবে কিছু কিছু বাসে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতেও দেখা গেছে।
গণপরিবহনগুলোতে যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না তার প্রমাণ মিলছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছেও। গতকাল সোমবারও রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না থাকা ও যাত্রীদের মাস্ক না পরায় জরিমানা করা হয়েছে। বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পৃথক ১৬টি মামলায় ১২ হাজার পাঁচ টাকা জরিমানা করে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন মনিরার আদালত।
দেশে গেল কয়েকদিনে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ১৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এভাবে সংক্রমণ বাড়লে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে জায়গা হবে না।’ এ নিয়ে সরকারও চিন্তিত ও আতঙ্কিত বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ জনের এবং ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ২৮ হাজার ১৫৪ জন এবং শনাক্ত হলেন ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জন। এ সময়ে করোনা শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতেও দেখা যাচ্ছে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির পরিপালন হচ্ছে না। যাত্রীদের অধিকাংশই মাস্কও পরছেন না। যারা পরছেন, তারাও ঠিকঠাকভাবে পরছেন না। যদিও এ বিষয়ে গতকাল খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সতর্ক করেছেন। তিনি সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পুরো সময়েও সংক্রমণ এত দ্রুতগতিতে বাড়েনি। মানুষ বেপরোয়াভাবে চললে এটা বাড়তে থাকবে।’
সরকারের ১১ দফা বিধিনিষেধ জারির পর ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ সব আসনে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। সমিতির নেতারা জানান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআরটিএ) মৌখিকভাবে তাদের এ সিদ্ধান্ত দিয়েছের। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো গেজেট প্রকাশিত হয়নি। যাত্রী পরিবহন ঠিকঠাক থাকলেও নেই শুধু ‘স্বাস্থ্যবিধির’ উপস্থিতি।
সকালে বাসাবো এলাকায় দেখা গেছে মিডওয়ে পরিবহনের প্রতিটি আসনে ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরেও দাঁড়িয়ে যাত্রী আছে। হিমাচল পরিবহনেও একই চিত্র দেখা গেছে। সকালে নগরীরতে চলাচলকারি অধিকাংশ পরিবহনেই বাড়তি যাত্রী নিতে দেখা গেছে।
তবে নিয়ম ভাঙার কারণ হিসেবে একে-অপরকে দোষারোপ করছেন যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা। লাব্বাইক পরিবহনের চালকের সহকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, পথে পথে যে পরিমাণ মানুষ, তাতে সবাইকে মানানো যায় না। যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে যান, বাধা দিলেও শোনেন না। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। আর যাত্রীরা বলছেন, গাড়িতে আসনের সমপরিমাণ যাত্রী ওঠার পরও বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছে বাসে শ্রমিকরা।
মালীবাগ রেলগেট এলাকা দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রী কামাল উদ্দিন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। তিনি বলেন, প্রায় ২০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে চাচ্ছি না। এখন মনে হচ্ছে বাধ্য হয়েই যেতে হবে। আসলে যারা যাচ্ছেন, তারাও অসহায়। চাইলেও অনেকক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন