শিরোনাম
সরকারি সব ধরনের নির্দেশনা মেনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের আগ্রাসী ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া এবং করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। চিরায়ত নিয়মে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে বইমেলা শুরুর বিষয়ে প্রকাশকরা মতামত দিয়েছেন। তবে তারা ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন। ওমিক্রন সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলা একাডেমি বইমেলা আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে মেলার দুই অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে কাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
রোববার অমর একুশে বইমেলা-২০২২ আয়োজন প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সরকারের সব নির্দেশনা মেনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এখন পর্যন্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বইমেলা চিরায়ত নিয়মে ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। সে অনুযায়ী আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এর মধ্যে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে সে অনুযায়ী সব জায়গায় আলোচনা করে যেটা সবার জন্য মঙ্গলজনক সেটাই করা হবে।
কবি নূরুল হুদা আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে চিরায়ত নিয়মে মেলা শুরু করার বিষয়ে প্রকাশকরাও মতামত দিয়েছেন। গত বছরের বইমেলার আলোকে দেখা যায়, মার্চ-এপ্রিলে করোনার প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। সেদিক থেকে মেলা ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা যুক্তিযুক্ত মনে করেন তারা। ওমিক্রনের আক্রমণ বাড়ছে, সেটি আমরাও খেয়াল রাখছি। তবে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সুন্দরভাবে মেলার আয়োজন হতে পারে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে করোনা শনাক্তের হার বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ডাবল ডোজ টিকা নেওয়ার সনদ ছাড়া রেস্টুরেন্ট, শপিংমল ও মেলায় যাওয়া অথবা বিমান ও ট্রেনে কেউ উঠতে পারবে না। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া এমন সিদ্ধান্ত আয়োজকদের ভাবনায় ফেলেছে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি কী সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে কবি নূরুল হুদা বলেন, সরকারি নির্দেশনাকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। পাশাপাশি মেলার প্রবেশের সময় আর কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়গুলো নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
অমর একুশে বইমেলা আয়োজন প্রসঙ্গে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রকাশকরা বইমেলা আয়োজনের পক্ষে। মেলা হলে সেটা ফেব্রুয়ারিতেই হওয়া উচিত। বাংলা একাডেমি ও আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তবে করোনা পরিস্থিতি এবং সরকারের নির্দেশনা আমাদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাতে আমরা কোনো পক্ষই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে না পড়ি। ২০২১ সালে বইমেলা আয়োজন নিয়ে সরকার, বাংলা একাডেমি ও আমরা সবাই বিব্রতকর অবস্থায় ছিলাম। এবার হাতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় আছে। তাই আমরা ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারি।
বাংলা একাডেমির একটি সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির আলোকে বড় ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা না এলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। চিরায়ত নিয়মে তিনি অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এবারের অমর একুশে বইমেলার থিম ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। এ থিমে বইমেলার সময়টাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ সাজবে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও বইমেলার নকশাকার হিসাবে আছেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।
জানা গেছে, এবার বইমেলার আয়তন গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে নতুন ১০টি প্রতিষ্ঠানকে বইমেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এবার সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোও থাকবে। অমর একুশে বইমেলা-২০২২ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, ওমিক্রনের আশঙ্কা সত্ত্বেও গতবারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ইতোমধ্যে বইমেলা আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনায় লালিত অমর একুশে বইমেলা সুপরিকল্পিত ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশা করছি।
ওমিক্রন বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সরকারের আরোপিত বিধি-নিষেধ সম্পর্কে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদা বলেন, সভা-সমাবেশ আর বইমেলার বিষয়টি এক নয়। অনেক বিধি-নিষেধ বইমেলায় এমনিতেই থাকবে। আজ কাউন্সিল সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনায় নতুন কোনো সিদ্ধান্ত এলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
সূত্র: যুগান্তর