শিরোনাম
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামিদের দেওয়া বক্তব্যের ওপর টানা চার দিনের যুক্তিতর্ক চলছে। দ্বিতীয় দিনে সাত আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয় ছয়জন আসামির। এনিয়ে ১৫ আসামির মধ্যে ১৩ জনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ যুক্তিতর্ক চলে। আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়ে আদালতের কাছে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছি। আসামিপক্ষের বক্তব্যের আলোকে মঙ্গলবার থেকে বাদীপক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে। সোমবার বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।
এজলাস থেকে বেরিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত জানান, ইতোমধ্যে ১৩ জন আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপ কুমার দাসের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর এই যুক্তিতর্ক নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ইচ্ছে করলে কিছু বলতে পারবে। এর পরই এই মামলা রায়ের দিকে চলে যাবে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যাব-১৫ কে।
৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর গত ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।