শিরোনাম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) যুক্ত হওয়া নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন হতে পারে চলতি মাসেই। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৫ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে সংস্থাটির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিক সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি আধুনিক ও পরিকল্পিত শহর গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসি জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক নগর গড়ে তুলতে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ১০০ বছরের জন্য প্রণীত ওই মাস্টারপ্ল্যানে ওয়ার্ডভিত্তিক অ্যাকশন প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে অনুপাতে কাজ করবে ডিএনসিসি। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। এরইমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে প্রকল্পের কাজ শুরুর সব প্রস্তুতি। উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। সময় পাওয়া সাপেক্ষে এ মাসেই শুরু হবে উন্নয়ন কাজ।
যেসব চ্যালেঞ্জ
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাত্র ৬ থেকে ৮ ফুট প্রস্থের সড়ক রয়েছে। অনেক স্থানে বহুতল ভবন হয়ে গেছে। অনেক রাস্তা আঁকাবাঁকা। খাল দখলসহ অবৈধ স্থাপনাও তৈরি হচ্ছে খাস জমিতে।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি আদর্শ ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রশস্ত রাস্তা, ড্রেনেজ ও সুয়্যারেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা কেন্দ্র, শরীরচর্চা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাদুঘর ও নাট্যমঞ্চ, খেলার মাঠ, পার্ক, পশু জবাইখানা, গণশৌচাগার, বাস টার্মিনাল থাকা আবশ্যক। কিন্তু এসব নতুন ওয়ার্ডে এর জন্য পর্যাপ্ত সরকারি জায়গা থাকলেও তা বেদল হয়ে গেছে। কোনও কোনও স্থানে বহুতল ভবন উঠে গেছে। আবার অনেক সরকারি জায়গা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। এসব উদ্ধার বা অধিগ্রহণ করে প্রকল্পের কাজ করতে হবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পেতে ওয়ার্ডবাসীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়াও মোকাবিলা করতে হতে পারে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে।
২০১৬ সালের ২৮ জুন নাগরিক সেবা বাড়াতে হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা, বেরাইদ, ডুমনি, সাঁতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে ১১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নতুন ১৮টি ওয়ার্ড হিসেবে করপোরেশনে যুক্ত হয়। ডিএনসিসিতে বিদ্যমান পাঁচটি অঞ্চলের বাইরে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলো নিয়ে আরও পাঁচটি অঞ্চল তৈরি করা হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এই ওয়ার্ডগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে তেমন কোনও কাজ করেনি সংস্থাটি। অধিকাংশ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট কাঁচা, নেই সড়কবাতি ও ফুটপাত। খালগুলো ময়লার ভাগাড়। খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। এছাড়াও নগরায়নের আগে আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় কতটুকু উন্মুক্ত স্থান, জলাধার, সবুজ এলাকা থাকা দরকার তা নির্ধারণ করা হলেও সেই মোতাবেক কাজ হয়নি।
ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, প্রকল্পের আওতায় নতুন ওয়ার্ডে ১৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। এরমধ্যে প্রধান সড়কগুলো চার লেনের ৩৩ কিলোমিটার করা হবে। দুই লেনের সড়ক হবে ৪০ কিলোমিটার। বিদুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য নির্মাণ করা হবে ৯৭ কিলোমিটার ইউটিলিটি ডাক্ট (টানেল)। এই খাতে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এছাড়া, ২৩৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৫১ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ওয়ার্ডগুলোতে ১৩টি খাল রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ২৮ দশমিক ৫১ কিলোমিটার। এই খালগুলোর উভয় পাশে ৫৮ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সাইকেল লেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৫৬ লাখ ছয় হাজার টাকা। এছাড়া ১২ হাজার ২৬৭টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
ডিএনসিসি জানিয়েছে—মাস্টারপ্ল্যানে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ড্রাফট স্ট্রকচার প্ল্যান (২০১৬-৩৫), ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজ ও ওয়াটার মাস্টারপ্ল্যান, ঢাকা যানবাহন কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনাগুলো (আরএসটিপি) পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যেন কোনও কিছু সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
ডিএনসিসি জানিয়েছে, পুরো মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন এলাকা গড়ে তুলতে হলে ২৬ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে চার হাজার ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির তহবিল থেকে আরও ২০০ কোটি টাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, নতুন ওয়ার্ডের কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই মাসে সময় চেয়েছি। তিনি সময় দিলে উদ্বোধন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পটির চ্যালেঞ্জর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব এলাকার রাস্তারগুলো অনেক সরু। খালগুলো বেদখল হয়ে গেছে। সরকারি খাস জমির মালিকানার রেকর্ড ব্যক্তিনামেও উঠে গেছে। এজন্য অনেক আইনি ঝামেলাও মোকাবিলা করতে হতে পারে। তবে যতোই চ্যালেঞ্জ আসুক আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবই। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেসব এলাকা অধিগ্রহণ করতে হবে তার জন্য জেলা প্রশাসককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। সুতরাং কেউ সংক্ষুদ্ধ হওয়ার কারণ নেই।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের নতুন ওয়ার্ডের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। আমরা নতুন এলাকাগুলোকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এর সব ইউটিলিটি সার্ভিস মাটির নিচে একই করিডোরে থাকবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন