শিরোনাম
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে গত বছর (২০২১ সালে) পুলিশ সপ্তাহ হয়নি। এবার করোনার প্রকোপ কমে আসায় দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে অনুষ্ঠানটির। আগামী ১৬ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত হবে এ বছরের (২০২২ সাল) পুলিশ সপ্তাহ। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, এই পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাহিনীর সদস্যরা তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—পুলিশের বাধ্যতামূলক ছুটি, ঝুঁকিভাতা, আসামি বহনের ভাতা বাড়ানো, ওভারটাইম চালুসহ এক গুচ্ছ দাবি।
পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ সভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তুলে ধরা হবে এসব দাবি-দাওয়া। গতবারের পুলিশ সপ্তাহে উপস্থাপিত যে দাবি পূরণ হয়নি, তাও এবার নতুনভাবে উপস্থাপিত হবে।
‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২২’ উদযাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ সপ্তাহের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠ। পুলিশের সব ইউনিট নিয়ে প্যারেড হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ পুলিশ সপ্তাহ হয় ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি। কিন্তু করোনার প্রকোপের কারণে গত বছর পুলিশ সপ্তাহ হয়নি। তারপরও পুলিশ সদরদপ্তর নানাভাবে চেষ্টা করেছিল অনুষ্ঠানটি করতে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার বিষয় চিন্তা করে সরকারের হাইকমান্ড থেকে মেলেনি সাড়া। এবার যেন পুলিশ সপ্তাহটি করা যায়, সেজন্য ছয় মাস আগে থেকে কাজ শুরু করে পুলিশ সদরদপ্তর। এ নিয়ে একাধিক টিম গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সরকারের হাইকমান্ডের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপি। এবার অনুমতি মেলে অনুষ্ঠানের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সপ্তাহ নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন আইজিপি। এবারের পুলিশ সপ্তাহে কিছুটা কাটছাঁট হতে পারে। উদ্বোধন করাসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। তবে সশরীরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবসহ অন্যরা উপস্থিত থাকবেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত পুলিশ সপ্তাহ পাঁচদিন হয়ে থাকে। সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নির্বাচিত পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম-সেবা) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) দেওয়া হবে। এছাড়া একাধিক দরবার, আলোচনা, মতবিনিময়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভাসহ নানা আয়োজন থাকবে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়েছিল। দাবিগুলো শুনে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তবে এখনো একটি দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স তৈরির দাবি জানানো হয়েছিল। এই দাবিটি পূরণ হয়নি এখনো। বিষয়টি আবারও প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হবে। এছাড়া পুলিশের জন্য বিশেষ ভাতার দাবি উত্থাপন করা হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য যে গাড়ি বরাদ্দ আছে, সেই গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। প্রশাসন ক্যাডার ও সেনা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ঋণে গাড়ি কেনার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকেও যেন এই ধরনের সুবিধা দেওয়া হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হবে। আরেকটি দাবি হচ্ছে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ভাতা দেওয়া। সরকারি অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা সব ধরনের ভাতা পেলেও পুলিশ তা পায় না। কর্তব্যরত অবস্থায় আহত বা নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য এককালীন থোক বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টিও উত্থাপন করা হবে। দাবি জানানো হবে পুলিশে ক্যাডার পদ বাড়ানোর।
এদিকে এবার করোনায় জীবন উৎসর্গকারী ১০৭ পুলিশ সদস্যকে দেওয়া হচ্ছে মরণোত্তর বিপিএম পদক।
পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কে যখন স্বজনরা আক্রান্তদের ছেড়ে যাচ্ছিল, তখনই জীবনের পরোয়া না করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। করোনার ভয়াবহতার সময় পুলিশ সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে আগে সেবা দিয়েছেন। পুলিশকে সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। করোনাকালে দেশ ও জনগণের কল্যাণে বাংলাদেশ পুলিশের ১০৭ জন গর্বিত সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
এর আগে সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ২০২০ সালে বিপিএম-পিপিএম পান ১১৮ জন। তার আগে ২০১৯ সালে ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে এই পদক দেওয়া হয়।
এছাড়া ২০১৮ সালে ১৮২ জন, ২০১৭ সালে ১৩২, ২০১৬ সালে ১২২, ২০১৫ সালে ৮৬ জন কর্মকর্তাকে বিপিএম-পিপিএম পদক দেওয়া হয়।
এদিকে পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘আইজিপি’স এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ (আইজিপি ব্যাজ) পাচ্ছেন বাহিনীর ৪০১ কর্মকর্তা।
পুলিশ সপ্তাহের শেষদিন ছয়টি বিশেষ ক্যাটাগরিতে মনোনীতদের এ পুরস্কার দেবেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
এআইজি মো. কামরুজ্জামান বলেন, কনস্টেবল থেকে শুরু করে ডিআইজি পদমর্যাদার ৪০১ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ‘আইজিপি ব্যাজ’ পাচ্ছেন। গতবারের চেয়ে ১৯৪ জন কম পুলিশ সদস্যকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের পুলিশ সপ্তাহে আইজিপি ব্যাজ পেয়েছিলেন ৫৯৫ জন সদস্য।
জানা যায়, মনোনীত ৪০১ জনের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ১৪২ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৭৩ জন, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১০১ জন, ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২২ জন, ‘ই’ ক্যাটাগরিতে ৫৪ জন ও ‘এফ’ ক্যাটাগরিতে নয়জন রয়েছেন।
সূত্র: জাগো নিউজ