শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে আগ্রহী তিন মন্ত্রণালয়

ফানাম নিউজ
  ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:০৯

নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশি আগ্রহী তিন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রকল্প চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়গুলো।

পরিকল্পনা বিভাগের ‘সাপোর্ট টু দ্য ইমপ্লিমেন্টশন অব দ্য বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান’ প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভা থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে আলোচিত ‘ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০’ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে মোট ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও ব-দ্বীপ সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা করতে চায় সরকার। দীর্ঘমেয়াদে পানি ও খাদ্যনিরাপত্তা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদি (১০০ বছর) সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

এ পরিকল্পনার বিশেষ দিক হচ্ছে এটি শুধু একটি কৌশলগত পরিকল্পনা নয়, এটি একটি টেকনো ইকোনমিক পরিকল্পনা। এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যে ৮০টি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প, ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প। ৮০টি প্রকল্পের মধ্যে মূলত তিনটি মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার পাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

জানা যায়, ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। শতবর্ষী এই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত সভা ও সেমিনার করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৭টি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৩৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে বলেন, ডেল্টাপ্ল্যান কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে এখনই নানা ধরনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হচ্ছে। এটা পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নের রোডম্যাপ। একক কোনো প্রকল্পে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নানা খাতে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে এই শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে জিইডি (সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এ মহাপরিকল্পনার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কৌশল, বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করছে। অধিকতর অর্থায়ন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী সরকারি-বেসরকারি খাতের সব অংশীজনদের অবহিত করাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় কৌশলগত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগে মোট ২৫ জন ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা বর্তমানে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

সক্ষমতা তৈরিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১৮৭ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ১৪৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য একটি সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ মডিউল ও একটি প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার চূড়ান্ত করা হয়েছে। রংপুর ও রাজশাহীতে মাঠ পর্যায়ের ৯৮ জন কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ সম্পর্কে অবহিতকরণের জন্য দিনব্যাপী দুটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়।

দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ঢাকায় দুদিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০’ শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস পরিকল্পনা নিয়েছে।

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, স্থানীয় প্রশিক্ষণ, সেমিনার/কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা সম্পর্কে। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের অন্যতম অংশ হলো সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে একটি বিশেষায়িত ডেল্টা উইং স্থাপন করা। সে লক্ষ্যে ডেল্টা উইং গঠনের জন্য একটি বিস্তারিত প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। এই উইংয়ে ৪৫ জন জনবল নিয়োগের কাজও চলমান।

২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) অন্তর্ভুক্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২৭টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের মন্ত্রণালয়ে ডেল্টাপ্ল্যানের ওপর নিয়মিত ইন হাউজ ট্রেনিং, সভা, সেমিনার চলমান।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, ডেল্টাপ্ল্যান সংশ্লিষ্ট ৩৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন প্রকল্প সংযোজন করে যার তালিকা জিইডিকে পাঠানো হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ডেল্টাপ্ল্যানকে সবার ধারণ করতে হবে এবং সব মন্ত্রণালয়কে ডেল্টার সঙ্গে অ্যালাইন করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) ম্যানডেটরি অবজেক্টিভ সবাইকে অবহিত করতে হবে।

এছাড়া সব মন্ত্রণালয়ে ডেল্টাপ্ল্যানের ওপর সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণ সংযোজন করার ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।