রবিবার ভোর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলবে যানবাহন

ফানাম নিউজ
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১১

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন হচ্ছে আজ। তবে, এর ওপর দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে রবিবার থেকে। প্রথম দফায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এটি খুলে দেয়া হবে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে তেজগাঁও (ফার্মগেট) পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হচ্ছে। র‌্যাম্পসহ এ পথের মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত মোট র‌্যাম্প ১৫টি। এর মধ্যে ১৩টি র‌্যাম্প খুলে দেওয়া হচ্ছে যানচলাচলের জন্য। তবে বনানী ও মহাখালীর দুটি র‌্যাম্প দুটি এখনই খুলছে না।

বিভিন্ন জায়গা থেকে উড়ালসড়কে ওঠা-নামা যাবে। যানজট পেরিয়ে উড়ালসড়কে উঠে খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে উড়ালসড়কের আরেক প্রান্তের গন্তব্যে। রাজধানীর যানজট পেরিয়ে উড়ালসড়কের সুবিধা যারা নিতে চান, তাদের জানতে হবে কোথা থেকে সড়কে উঠবেন আর কোথায় নামবেন।

হ্যাঁ, যারা পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, ফার্মগেট থেকে এসে উড়ালসড়কে উঠতে চান, বিজয় সরণি ওভারপাস কিংবা তেজগাঁও এলাকায় যেতে হবে তাদের।

বিজয় সরণি হয়ে র‍্যাংগস ভবন ভেঙে তৈরি ওভারপাসটিতে উঠে তেজগাঁওয়ে যাওয়ার আগেই উড়ালসড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। আবার তেজগাঁও থেকে বিজয় সরণির দিকে আসতে ওভারপাসে আরেকটি সংযোগ রয়েছে ওঠার জন্য। রাজধানীর দক্ষিণ, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাংশের মানুষের জন্য উড়ালসড়কে ওঠার এটিই সহজ পথ।

এছাড়াও যারা বনানী যেতে পারবেন, তারা বনানী রেলস্টেশনের সামনে দিয়ে উড়ালসড়কে উঠতে পারবেন। তবে উত্তর দিক থেকে এসে নামার জন্য মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেটগামী যানবাহনের সুবিধাজনক সহজ পথ ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড।

আরও পথ রয়েছে ঢাকা উড়ালসড়কে ওঠানামার। দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান- ১. হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা। ২. প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব।

দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন নামার স্থান- ১. বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ। ২. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে। ৩. ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।

উত্তর অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান- ১. বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন। ২. বনানী রেলস্টেশনের সামনে।

উত্তর অভিমুখী যানবাহন নামার স্থান- ১. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে। ২. বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর সামনে বিমানবন্দর সড়ক। ৩. কুড়িল বিশ্বরোড ৪. বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।

এদিকে সেতু বিভাগের গণবিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) জানানো হয়, ঢাকা উড়ালসড়কে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। তাই মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা নিয়ে উড়ালসড়কে ওঠা যাবে না।

গাড়ি নিয়ে গিয়ে উড়ালসড়কে দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উড়ালসড়কে উঠতে ও চলাচল করতে পারবেন না পথচারীরা।

সেতু বিভাগের তথ্যানুসারে, মূল উড়ালসড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর ওঠা-নামার স্থানে (র‍্যাম্প) সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

উড়ালসড়কে চলাচলে টোল হার যানবাহনের শ্রেণিভেদে ভিন্ন। শ্রেণি-১: কার, ট্যাক্সি, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম), টোল দিতে হবে ৮০ টাকা।

শ্রেণি-২: মাঝারি ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত), টোল দিতে হবে ৩২০ টাকা।

শ্রেণি-৩: ট্রাক (৬ চাকার বেশি), টোল দিতে হবে ৪০০ টাকা।

শ্রেণি-৪: সব ধরনের বাস (১৬ সিট বা তার বেশি), টোল দিতে হবে ১৬০ টাকা।

প্রসঙ্গত, ঢাকা উড়ালসড়কের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্রুতগতির উড়ালসড়কের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। উড়ালসড়ক প্রকল্পটি দুই ভাগে বিভক্ত। মূল নির্মাণকাজ ও সহযোগী কাজ। মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করছে। বাকিটা খরচ করছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও পরামর্শকদের পেছনে ব্যয়ে আলাদা প্রকল্প রয়েছে। এই অর্থ ব্যয় করছে সরকার। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। দুটি প্রকল্প মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০০৯ সালে। নির্মাণের চুক্তি হয় ২০১১ সালে। নির্মাণকাল ধরা ছিল সাড়ে তিন বছর।