শিরোনাম
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কানাডা বা ইউরোপে পাঠানো কোনো সমাধান নয়। বরং মায়ানমারে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনই হলো রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে উল্লেখ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার (২৬ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ-এর উদ্যোগে 'জেনোসাইড এন্ড জাস্টিস: বাংলাদেশ রেসপন্স টু দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস' শীর্ষক এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায় সকল ধরনের অপরাধ কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। জঙ্গিবাদ দমনে অনেক উন্নত দেশ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফল হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলো ধর্মান্ধতার প্রজনন স্থান হয়ে উঠেছে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোর লোকবল সংগ্রহের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে এই ক্যাম্পগুলো। এটি অনেক বড় সমস্যা। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য সমস্যা নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য সমস্যা।
রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান জরুরি উল্লেখ করে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদাসহ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন সময়ে মায়ানমার রোহিঙ্গাদের ফরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিল কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের কূনৈতিক তৎপরতা অব্যহত রয়েছে এবং সেখানে বেশ অগ্রগতিও আছে। আমরা যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে এর সমাধান চাই না। এটি একটি মানবিক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান অত্যন্ত জরুরি। এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক যে চাপ থাকার কথা সেটা লক্ষ করছি না। এখানে চীনের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। আমরা ভারতের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ তারাও মায়ানমারকে বুঝানোর চেষ্টা করছে৷
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবিলম্বে দেশে ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। এসময় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কার্যকর উপায় বের করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদানকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গারা কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারে নানারকম বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। তাদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার ও পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো। এটি গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছে যায় ২০১৭ সালে। তারা আমাদের দেশে ছয় বছর ধরে শরণার্থী হিসেবে থাকলেও বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো সমাধানের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
বর্তমানে রোহিঙ্গারা যেই এলাকায় বসবাস করছে সেখানে নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সেই এলাকাগুলোতে নিয়মিতভাবে হত্যা, খুন, গুম, মানবপাচারসহ নানা রকমের অনৈতিক ও অবৈধ কার্যক্রম চলছে। সেখানে ১০টার মতো জঙ্গি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ আমরা সেই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে সব ধরনের মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিলা এ চৌধুরী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি জোহার ভ্যানদার ক্ল্যাও, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এয়ার কমোডর (অব:) ইশফাক এলাহী চৌধুরী, মাইয়েশন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিজে (গবেষণা)-এর পরিচালক ড. এম সঞ্জীব হোসেন প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।