শিরোনাম
ভারতের টেলিগ্রাফ প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদক দেবদীপ পুরোহিত বলছেন, এই জোড়া বার্তা বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যমতের ইঙ্গিত দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে; সেপ্টেম্বরে জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই জোড়া বার্তা দেওয়া হতে পারে।
প্রথম বার্তাটি হচ্ছে, আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। উভয় পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছেছে যে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালি করতে হবে যাতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে চীনপন্থী ও ইসলামপন্থী নেতাকে ছেঁটে ফেলতে হবে। আগামী নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে। দিল্লি ও ওয়াশিংটন পক্ষ ঐক্যমতে পৌঁছেছে যে বাংলাদেশের সংবিধানে যেহেতু নেই তাই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই যা কিনা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান দাবি।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ লিখেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠক হয়েছে ভারত এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে।
সূত্রমতে, অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য ছিল, বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দুদেশের মধ্যে বড়ো ধরনের ঐকমত্য হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে শেখ হাসিনা দাবি করে আসছেন। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানদণ্ড নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশ।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের শেষ দুটি জাতীয় নির্বাচনকে নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে কখনোই কোনও প্রশ্ন তোলেনি নয়াদিল্লি। ২০১৮ সালের সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোট ৯৬ শতাংশের বেশি আসন পেয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই প্রথম শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
টেলিগ্রাফ বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে তা নিয়ে ভারত ততক্ষণ চিন্তা করবে না যতক্ষণ ফলাফল শেখ হাসিনার পক্ষে থাকে। মূলত প্রতিবেশীদের মধ্যে সবসময়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে থাকে নয়াদিল্লি।
প্রতিবেদন বলছে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য চলাচলের অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত ভারতের অনেক ইচ্ছাই আওয়ামী লীগ সরকার পূরণ করেছে। তা সত্ত্বেও চীনের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের নৈকট্য নয়াদিল্লির জন্য উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর এই কারণেই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন অবস্থানে এসেছে।
ঢাকার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে। তরুণ সমাজ, যারা রাজনীতিতে আগ্রহী নয়, তারাও দেশগড়ার কাজে উৎসাহিত হবে। দলীয় আনুগত্য না দেখে জনপ্রিয় ব্যক্তিকে নির্বাচনে প্রার্থী করলে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হবে। সর্বোপরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ওই সূত্র এও বলেছে, এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়া শক্তিশালী নেতা শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জোড়া পরামর্শ আমলে নেবেন কি না?