প্রধানমন্ত্রীর কাজে সন্তুষ্ট ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি: আইআরআই’র জরিপ

ফানাম নিউজ
  ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:৩৪

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ইন্টারন্যাশাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপের ফল অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ বাংলাদেশি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই ভালো করছেন। ৪০ শতাংশের অভিমত, কিছুটা ভালো করছেন। এদিকে ৫৩ শতাংশ মনে করেন দেশ সঠিক পথে নেই। এজন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন অর্ধেক উত্তরদাতা।

সম্প্রতি আইআরআইর ওয়েবসাইটে ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। গত ১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জেলায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৫ হাজার মানুষ এ জরিপে অংশ নেন।

উত্তরদাতাদের মধ্যে ২ হাজার ৩৪৮ জন ছিলেন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে। ৩৬ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে ছিলেন ১ হাজার ৭৩৩ জন। ৫৬ বছরের ওপরে ছিলেন ৯১৯ জন।

উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৬৩৩ জন এবং নারী ২ হাজার ৩৬৭ জন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহরের ১ হাজার ৫৫০ জন এবং গ্রামের ৩ হাজার ৪৫০ জন।

জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জনসমর্থন ধরে রেখেছে। তবে বিরোধীদলের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৯২ শতাংশ জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ শতাংশ বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চান। তবে বেশিরভাগই মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচনে বিরোধীদের অংশ নেওয়া উচিত।

জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে খুব ভালো বললেও মাত্র ২১ শতাংশ মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। ২৬ শতাংশের অভিমত, সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখেন। বাকিরা সুষ্ঠু ভোটের আশা দেখছেন না।

যদিও ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, ভোট দিতে যাবেন। যারা ভোট দেবেন না, তাদের ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন গত নির্বাচনে অন্য কেউ তার ভোট দিয়ে দিয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা বিরোধী দলের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন ঐকমত্যের সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। ২৫ শতাংশ উত্তরদাতার অভিমত, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচনে নতুন দল চান। বাকিরা বর্তমান দলগুলোর ওপর ভরসার কথা জানিয়েছেন।

৬৫ শতাংশ মানুষ জোরালোভাবে বা মোটামুটি মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও বিরোধী দলগুলোর অংশ নেওয়া উচিত।

২০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবস্থা খুব ভালো। ৩০ শতাংশের অভিমত, মোটামুটি ভালো। ৪৫ শতাংশের অভিমত, খারাপ অথবা খুব খারাপ। ২০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। ৩১ শতাংশের অভিমত, কিছুটা স্বাধীনতা রয়েছে। ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, মতপ্রকাশে প্রবল ভয় বা কিছুটা ভয় রয়েছে।

৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, দেশ ঠিক পথে চলছে। তাদের ৭ শতাংশ উত্তরদাতা পদ্মা সেতুর নির্মাণের কারণে এই অভিমত জানিয়েছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের জরিপে ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছিলেন, দেশ ঠিক পথে এগোচ্ছে। একই সময়ে মাত্র ১৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করতেন, দেশ ভুল দিকে যাচ্ছে। সড়ক ও সেতুর উন্নয়নে ৮৮ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্ট। দ্রব্যমূল্য এবং বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকায় যথাক্রমে ৫৯ এবং ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা অসন্তুষ্ট।

১৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, অর্থনীতি খুব ভালা অবস্থায় আছে। ২৯ শতাংশ মনে করেন, ভালো অবস্থায় রয়েছে। ৫১ শতাংশ উত্তরদাতার অভিমত, অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ বা খারাপ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৭৬ শতাংশ মানুষ মনে করতেন, অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো বা ভালো। সর্বশেষ জরিপে ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। ৩৬ শতাংশ মনে করেন, অবনতি হবে।

৩১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, বিগত দিনে তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, অবনতি হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের জরিপে ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা উন্নতির কথা জানিয়েছিলেন। এবার ৩৩ শতাংশ মানুষ আশাবাদ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তার ব্যক্তিগত আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। সাড়ে তিন বছর আগে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা উন্নতির বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। ৮৮ শতাংশ মনে করেন, ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। একই সংখ্যক উত্তরদাতার অভিমত, রাজনৈতিক অভিজাত এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে।

৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুব ভালো বা ভালো পর্যায়ে রয়েছে। ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতার অভিমত, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। ৩৫ শতাংশ মানুষের অভিমত, সামনের দিনগুলোতে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। ৩৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। ২১ শতাংশের অভিমত, মূল্যস্ফীতি মূল সমস্যা। নির্বাচন কমিশনের কাজে ৩৯ এবং পুলিশের কাজে ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তুষ্ট নন।

ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে প্রভাব নিয়েও জানতে চাওয়া হয় জরিপে। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে মত জানান উত্তরদাতারা। তাদের ৪২ শতাংশ ইন্টারনেট এবং ৪০ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করেন।