শিরোনাম
সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পৌঁছানোর জন্য মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এলজিআরডি মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করুন।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নামে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ একক পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। দেশে এটি এ ধরনের প্রথম প্রকল্প।
একই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) সহায়তায় পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটির পয়োনিষ্কাশন ক্ষমতা ২০ কোটি মেট্রিক টন।
শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকারপ্রধান জানান, তার সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের অধীনে সরকার বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত স্যুয়ারেজ সুবিধা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়।
তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ তাদের নাগালের মধ্যে সব শহুরে সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেন। তিনি দেশবাসীকে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রয়োজনে পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না, দয়া করে এগুলো ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। আপনিও এতে উপকৃত হবেন, কারণ এতে বিলও কম হবে।
জানা গেছে, দাশেরকান্দি প্ল্যান্টের দৈনিক ৫০ লাখ টন পয়োনিষ্কাশন শোধনের ক্ষমতা রয়েছে, যা রাজধানীর মোট পয়োনিষ্কাশনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে এ প্ল্যান্ট মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
চীনের অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬২ দশমিক ২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ১০৬ দশমিক ৪২ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে, ১০ কোটি টাকা ওয়াসার তহবিল থেকে এবং অবশিষ্ট ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছে।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ পয়োনিষ্কাশন শোধনের জন্য পাগলা, উত্তরা, রায়েরবাজার এবং মিরপুর এলাকায় আরও চারটি পয়োনিষ্কাশন শোধনাগার নির্মাণের লক্ষ্যে সরকারের একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এ বর্জ্যের ৯০ শতাংশ পাইপলাইন কভারেজের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে সারাদেশে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্ল্যান্টটি এসডিজি লক্ষ্য-৬ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একটি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার পথপ্রদর্শক।
খিলগাঁও থানার অন্তর্গত আফতাবনগর সংলগ্ন দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেতন, মগবাজার, মালিবাগ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বক্তব্য রাখেন।
এসময় ঢাকা ওয়াসা, দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট ও পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পৃথক তিনটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।