শিরোনাম
সারাবিশ্বে নোবেল পুরস্কার একটি সম্মান ও গর্বের বিষয়। যারা এ পুরস্কারে ভূষিত হন তারা দেশে দেশে সেলিব্রেটি হিসেবেই বিবেচিত। প্রতি বছর যখন এ পুরস্কার ঘোষণার মাহেন্দ্রক্ষণ আসে পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা তখন চোখ রাখেন খবরের কাগজে, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়। কারণ- এ পুরস্কারের আর্থিক মূল্যমান অনেক বেশি। ১৯০১ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে সুইডেনের নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার দেওয়ার আগমুহূর্তে দেখা যায়, খবরে খবরে জমজমাট থাকে বিশ্ব মিডিয়া, আর মিডিয়া মোড়লরা এই পুরস্কার কে বা কারা পেতে যাচ্ছেন - পুরস্কারপ্রাপ্তির তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনায় মত্ত থাকেন। অবশেষে যখন ঘোষিত হয় পুরস্কার প্রাপ্ত প্রার্থীর নাম তখন দেখা যায় অদ্ভুত সব কাÐ। সে তালিকা কখনো কখনো দেখা যায় ভুতুড়ে এবং আশ্চর্য নামে ঠাঁসা। আর তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় নোবেলজয়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর ঢল নামে নেট দুনিয়া থেকে সকল মাধ্যমে।
প্রশ্ন হলো নোবেল পুরস্কার দেয় যে প্রতিষ্ঠান, তার উদ্দেশ্য কী, প্রতিষ্ঠানের এত অর্থ কোথা থেকে এসেছে? আমাদের খোলা চোখে আমরা দেখি বা জানি সেইটুকুই যেটুকু না জানলে আমাদের চলে না। আর তাই বুঝি অনেক কিছুই আমাদের খতিয়ে দেখতেও মন চায় না। আসা যাক এবারে নোবেল সম্পর্কে; আলফ্রেড নোবেল ছিলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী, যার পরিবার ছিল দরিদ্রতম। নোবেলের বাবা রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে একদা আশ্রয় নেন। এরপর তার পরিবার সেখানে যুদ্ধাস্ত্র, অস্ত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ এবং বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। সেখানে এ পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয় অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে। আলফ্রেড নোবেলের বাবা ইমানুয়েল নোবেল ছিলেন একজন ঘাতক মানসিকতার মানুষ। ইমানুয়েল অস্ত্র ব্যবসার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে অর্থ আয় করতেন। আলফ্রেড নোবেলও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তার বাবা ও তার এত অর্থ শেষমেশ কোথায় যাবে, তা নিয়ে ভাবনার অন্ত ছিল না, ফলে অনেকবারই তিনি উইল লেখেন। শেষমেশ তার মৃত্যুর এক বছর আগে লেখা উইলটি কার্যকর হয়।
ফরিদপুরের সন্তান রেজা সাত্তার। বসবাস করেন কানাডার টরেন্টো শহরে। পেশায় একজন তড়িৎকৌশলী হলেও সৃজনশীল লেখা ও গবেষণা তার নেশা। পড়ালেখার সূত্রে তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর রাশিয়ায় ছিলেন। তিনি যুদ্ধ ও মানববিধ্বংসী বিরোধী এক লেখক এবং গবেষক। দীর্ঘদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর ঘটনাবলি নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করেছেন রেজা, তুলে এনেছেন পৃথিবীর অন্ধকারাচ্ছন্ন যুদ্ধ ইতিহাস। লেখক একটি ঘাতক পরিবারের আয় এবং অর্থ ব্যবহার নিয়েই কথা বলেছেন এই গ্রন্থে। তিনি মনে করেন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই নোবেল ফাউন্ডেশন যে পুরস্কার দিয়ে চলেছে প্রতি বছর তার পেছনের ঘটনা আরও ভয়ংকর এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একটি বিষয় লক্ষ্য করলে পরিষ্কার হয়ে যায়- নোবেল পরিবারের হত্যা ইতিহাস কেন লোক সম্মুখে আসে না? বরং বলা হয় খুব মহান মানুষ ছিলেন আলফ্রেড নোবেল!
তাছাড়া রেজা সাত্তার প্রশ্ন তোলেন নোবেল পুরস্কার যারা পান, তারা কী এর যোগ্য, নাকি এদেরকে প্রতীকী হত্যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানানো হয় নোবেল জয়ের মধ্য দিয়ে। অসংখ্য তথ্যে পূর্ণ এই গ্রন্থটি পাঠকের নিকট নোবেল পুরস্কার বিষয়ে নানান প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। এ ছাড়া গ্রন্থটির অনুবাদক ইয়াসির আজিজের চমৎকার ভাষাশৈলী ও সাবলীলতা অনুসন্ধানী পাঠককে আকৃষ্ট করবে।
‘জব্দ করো নোবেল ফাউন্ডেশন’
মূল : রেজা সাত্তার
ভাষান্তর : ইয়াসির আজিজ
প্রকাশক : কবি প্রকাশনী