শিরোনাম
বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী আর নেই। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কানাডার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কানাডার স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে (বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা) টরন্টোতে অশোয়ার লেক রিচ হেলথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন কবির জামাতা নাদিম ইকবাল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ার জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। যারা উলানিয়ার চৌধুরী বংশ হিসাবে পরিচিত। তার পূর্বপুরুষ শায়খ মহম্মদ আসাদ আলী পারস্য থেকে ভারতবর্ষের অযোধ্যা শহরে আসেন। আসাদ চৌধুরীর মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম।
আসাদ চৌধুরী আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৬৩ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকরির পর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
আসাদ চৌধুরী কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ইত্যাদি রচনা করেন। কিছু অনুবাদকর্মও তিনি সম্পাদনা করেন। ১৯৮৩ সালে তার রচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। কবি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি অজস্র পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- কবিতা তবক দেওয়া পান (১৯৭৫); বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬); প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬); জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২); যে পারে পারুক (১৯৮৩); মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪); মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫); আমার কবিতা (১৯৮৫); ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫); প্রেমের কবিতা (১৯৮৫); দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭); নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২); টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭); বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮); বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮); কবিতা-সমগ্র (২০০২); কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩); ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)।
প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, কোন অলকার ফুল (১৯৮২)। শিশুসাহিত্যের মধ্যে রাজার নতুন জামা (রূপান্তর, ১৯৭৯); রাজা বাদশার গল্প (১৯৮০); গ্রাম বাংলার গল্প (১৯৮০); ছোট্ট রাজপুত্র (অনুবাদ : ১৯৮২); গর্ব আমার অনেক কিছুর (১৯৯৬); ভিন দেশের মজার লোককাহিনী (১৯৯৯); তিন রসরাজের আড্ডা (১৯৯৯) কেশবতী রাজকন্যা (২০০০); গ্রাম বাংলা আরো গল্প (২০০০) তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী (জীবনী, ২০০০); জন হেনরি (আমেরিকার লোককাহিনী, ২০০১); মিকালেঞ্জেনো (জীবনী, ২০০১) ছোটদের মজার গল্প (২০০১); সোনার খড়ম (২০০৬); মুচি-ভ’তের গল্প (২০০৬)।
জীবনী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু (১৯৮৩); রজনীকান্ত সেন (১৯৮৯); স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী (২০০১)। ইতিহাস বইয়ের মধ্যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৩)। অনুবাদ, বাড়ির কাছে আরশিনগর : বাংলাদেশের উর্দু কবিতা (২০০০); প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা (২০০৫)। সম্পাদনা গ্রন্থ, যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ (১৯৯১ যুগ্মভাবে); ছয়টি রূপকথা (১৯৭৯)।