শিরোনাম
অমর একুশে বইমেলার প্রথম ছুটির দিন আজ। প্রকাশক, লেখক সবাই বলছেন দিনটিতে মেলা বেশ জমবে। তাদের পূর্বাভাসের আঁচ মেলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ওই সময় নানা বয়সি মানুষ এসেছিলেন মেলায়।
আড্ডা, কবিতা, গল্প আর সাহিত্য নিয়ে মেতে ছিলেন অনেকে। বইয়ের বিক্রি খুব একটা না হলেও পাঠক নতুন বই খোঁজ করেছেন। তবে এত প্রস্তুতির পরও মেলা মাঠের অপরিচ্ছন্নতা, শৌচাগার তৈরি না হওয়ায় রীতিমতো ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকে। আজ মেলার দ্বার খুলবে বেলা ১১টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলায় এসেছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। তিনি অনেকটা ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘মেলায় দ্বিতীয় দিনেও নানা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকাটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে শুধু বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ময়লা পড়ে থাকবে, এই ভাবনাটা ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এবারের বিন্যাস কিছুটা কম জায়গা নিয়ে। ভিড় বেশি হলে কী অবস্থা দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়। মেলায় বইয়ের সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন কতগুলো বই প্রকাশ হয় সেটিই দেখার বিষয়।’
তবে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিন্যাস নিয়ে বেশিরভাগ প্রকাশকই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, বিশাল পরিসরে মেলার স্টলবিন্যাস হওয়ায় গত কয়েক বছর অনেক প্রকাশক অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আবার যারা ভালো জায়গায় স্টল প্যাভিলিয়ন পেয়েছেন তারা একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। এবার সেটি হওয়ার সুযোগ নেই। এবার পাঠক এলে সবাই কমবেশি ব্যবসা করতে পারবেন।
সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, এবার যে বিন্যাস হয়েছে সেটিও অনেকটা পরীক্ষামূলক বলা যায়। গত কয়েক বারের চেয়ে একেবারেই ভিন্নরকম বিন্যাস। তবে দেখার বিষয়, ভিড় বেশি হলে কী হয়। আশা করছি, ভালো বইমেলা হবে।
অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ বলেন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বইমেলার নানা পরিবর্তন দেখেছি। যার ধারাবাহিকতা এবারও আছে। মেলার আয়োজন এবার ব্যতিক্রম। আশা করছি খুব ভালো বইমেলা হবে।
এদিকে মেলায় বই প্রবেশ করানোর সময় নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই প্রকাশের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বেলা ১১টা। যেটি আগে ছিল দুপুর ২টা পর্যন্ত।
অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, বেলা ১১টার মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে বই প্রবেশ করানোটা রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তার মধ্যে অনেক প্রকাশনার কর্মীরা এখনো প্রবেশ পাস পাননি। এই বিষয়গুলো আমরা যারা সরাসরি মাঠে কাজ করি তাদেরকে ভীষণভাবে ভোগাচ্ছে।
মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা লোকসাহিত্যে হাটুরে কবিতা শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিলু কবীর। আলোচনায় অংশ নেন বেলাল হায়দার পারভেজ, আহমেদ মাওলা ও তানভীর আহমদ সিডনী। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আখতার হোসেন, মুহাম্মদ শামসুল হক, ফারুক মাহমুদ এবং পারভেজ হোসেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আসাদ মান্নান, নাসির আহমেদ, মাহবুব আজিজ। আবৃত্তি করেন আশরাফুল আলম, লায়লা আফরোজ ও ফয়জুল্লাহ সাঈদ। পুঁথিপাঠ (হাটুরে কবিতা) করেন পাবনার শিল্পী ফকির আবুল হোসেন। সংগীত পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী, তিমির নন্দী, রুমানা ইসলাম, তানজিনা করিম স্বরলিপি ও আজমা সুরাইয়া শিল্পী।
নতুন বই : বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেলার দ্বিতীয় দিন নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ২১টি। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের লেখা বই ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’।
প্রথমা থেকে এসেছে জহির রায়হানের অগ্রন্থিত গল্পগুচ্ছ ‘যখন যন্ত্রণা’, বাতিঘর থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘স্বপ্ন ছিল, থাকবেও’, সময় প্রকাশনী থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘প্রলয়’, সময় প্রকাশন থেকে আহমদ রফিকের ‘ফিরে দেখা অমর একুশ ও অন্যান্য ভাবনা’, অনুপম প্রকাশনী থেকে মো. এনামুল হকের ‘মুক্তিযুদ্ধে আঞ্চলিক বাহিনীসমূহ’, অন্যপ্রকাশ থেকে সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়’, ঐতিহ্য থেকে আফসান চৌধুরী সম্পাদিত ‘১৯৭১ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম’, অবসর থেকে সান্তা রিকির অনুবাদে ইয়োকো ওগাওযার ‘দ্য হাউজকিপার অ্যান্ড দ্য প্রফেসর’, কথাপ্রকাশ থেকে সালেক খোকনের ‘বীরত্বে একাত্তর’, আজব প্রকাশ থেকে সাকী আহমদের ‘ছোটদের বই’ এবং মাহবুব জামিল পুলকের কবিতার বই ‘আততায়ী শহর’।