“ব্যবস্থাপক যাহা করেন তাহাই ব্যবস্থাপনা”

ড.মীজানুর রহমান
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:২৩
আপডেট  : ০২ মার্চ ২০২২, ১০:২৩

“বুড়ার কবর কই, বুড়ি কান্দে কই”, চাঁদপুর এলাকার একটি প্রবাদ (সূত্র: জনাব এম শামসুল আলম,  মাননীয় প্রতিমন্ত্রী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়)। মূল সমস্যায় না গিয়ে যখন সমাধান নিয়ে বেশি পর্যালোচনা শুরু হয় তখনই আমার এই প্রবাদটির কথা মনে পড়ে। মার্কেটিং শাস্ত্রে পণ্যকে বলা হয় "সমস্যার সমাধান" (product is a solution of customers problem)। এই বিবেচনায় 'মশারি' হচ্ছে মশার আওয়াজ এবং কামড় থেকে  পরিত্রাণ। মানুষের মশারির প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন হচ্ছে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচা।

মানুষ যখন পণ্যটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন এটাকে বলা হয় "Marketing Myopia"( Theodore Levitt, Harvard Business Review 1975)। Myopia শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'ক্ষীণ দৃষ্টি'। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সমাধান নিয়েই বেশি ভাবা হয়। সমস্যাটি পর্যালোচনা করলে যে তার চেয়েও ভালো সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে তা কখনো ভাবা হয় না। কেবল সমাধান নিয়ে ব্যস্ত থাকলে যে বিপদে পড়তে হয় তা দেখেছিলাম আমাদের বন্ধু  অমূল্য'র ক্ষেত্রে। অমূল্য উচ্চ মাধ্যমিক বীজগণিত সমাধান বইয়ের প্রায় ১০০০ আলজাব্রা মুখস্থ করেছিল, কিন্তু পরীক্ষায় সেবছর প্রত্যেকটা প্রশ্নই একটু অদল-বদল করে দেয়া হয়েছিল। যে অমূল্য কোনদিনই মূল বই (সমস্যা) দেখেনি,  তাঁর ক্ষেত্রে যা হওয়ার তাই হল। অমূল্য গণিতে ফেল করল। 

প্রযুক্তি ও পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই বিদ্যমান সমাধান নিয়ে ব্যস্ত থেকে সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে। অথবা বিদ্যমান  সমাধানটিকে আরও উন্নত করার চেষ্টার কারণে  উন্নততর বিকল্প বিকল্প সমাধানের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সমস্যার সমাধান আসলে একটি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া (management process)। ব্যবস্থাপনার শব্দটি নিয়েও ঝামেলা আছে। গত ৪০ বছর ধরে যখনই ব্যবস্থাপনার ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়েছি তখনই দেখেছি প্রায় শতভাগ ছাত্র তাঁদের উত্তরপত্র লেখা আরম্ভ করেছে একটি সংজ্ঞা  দিয়ে, সেটি হচ্ছে, "ব্যবস্থাপক যাহা করেন তাহাই  ব্যবস্থাপনা" ("management is  what manager does")। খুবই রোমাঞ্চকর সংজ্ঞা। ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত বলার পরে উপসংহারে এসে Allen এই মন্তব্যটি করেছিলেন। আর এটাকেই বিগত প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা হিসেবে ছাত্ররা লিখে যাচ্ছে (Louis A Allen, "Management and Organisation",  Book, 1958)।   ব্যবস্থাপক কি করে তা বুঝার জন্য পুরো 'management' শব্দটি বুঝার দরকার নেই।  'manage'  এর অর্থটুকু বুঝলেই হবে‌। প্রতিনিয়ত 'ম্যানেজ' শব্দটা আমরা ব্যবহার করি। আমরা পরিবার, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, কর্মী, জনতা, সমাজ ইত্যাদি ম্যানেজ করেই টিকে আছি। আসলে কেউ যখন আমাদের কাছে কোন সমস্যা নিয়ে আসে, সাধ্যের মধ্যে থাকলে অথবা নেহায়েতই সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে প্রায়ই বলি, 'don't worry, I will manage'।  তার মানে হচ্ছে আমি ওই ব্যক্তির সমস্যাটি সমাধান করে দিব। অতএব ব্যবস্থাপক  সমস্যার সমাধান করে । সমস্যার সমাধান আর ব্যবস্থানা প্রক্রিয়া  একেই। সমস্যা সমাধানের চারটি ধাপ- সমস্যা বিশ্লেষণ,পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ও নিয়ন্ত্রণ (analysis, planning, implementation, and control)।

 ধরা যাক আপনার তীব্র পেট ব্যথা হচ্ছে। পেট ব্যথা কেন হচ্ছে তার কারণ না জেনেই চারটা "নো-স্পা" ট্যাবলেট খেয়ে ফেললেন। এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে। যদি ওই ব্যথা কিডনি ইনফেকশনের কারণে হয় ফলাফল হবে আরো মারাত্মক; হাসপাতাল হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত যাওয়া লাগতে পারে। প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যথার কারণ জানার জন্য এক্সরে বা আল্ট্রাসনোগ্রাম করা । অনেক কারনেই পেট ব্যথা হতে পারে। খাদ্যে বিষক্রিয়া, এপেন্ডিস, হার্নিয়া, কিডনি বা লিভার ইনফেকশন ইত্যাদি। আপনার পেট ব্যথার কারণ  যদি হয় কিডনি ইনফেকশন। ব্যথা নিরাময়ের ট্যাবলেট দিয়ে সারানো যাবে না। অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। পেট ব্যথার অনেকগুলো কারণের একটি হচ্ছে কিডনির জটিলতা। সমস্যাটি সমাধানেরও অনেক অনেক পথ আছে। কিডনি বা গলব্লাডার স্টোন অপারেশন ছাড়াও ক্রাশ করা যায়, সেটা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে হয়। ওষুধ খেয়ে আপনি সেরে উঠতে পারেন। ওষুধ আবার তিন প্রকার- এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক এবং আয়ুর্বেদিক। আয়ুর্বেদিক আবার দুই প্রকার- তিব্বতীয়া, মোহাম্মদিয়া। অপারেশন করতে পারেন, অপারেশনও আজকাল বহু ধরনের হয। "কি-হোল"  সার্জারি,  মাইক্রো সার্জারি,  ওপেন সার্জারি,  লেজার সার্জারি ইত্যাদি। অন্তত বিশটি  সমাধানের সূত্র পেয়ে যাবেন। আমেরিকার 'জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মেডিকেল  সেন্টারে গিয়ে অপারেশন করা থেকে আরম্ভ করে দেওয়ানবাগী হুজুরের পানি পড়া খাওয়া পর্যন্ত। আপনার কাজ হচ্ছে সম্ভাব্য সমাধানগুলোর তালিকা প্রণয়ন করে সবকটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া। প্রথমে দেওয়ানবাগী হুজুরের পানি পড়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখলেন, একজন সাক্ষীও পাওয়া গেল না যে বলছে সত্যি সত্যি কেবলমাত্র হুজুরের পানি পড়া খেয়ে  তাঁর পেট ব্যাথা ভালো হয়ে গেছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে অপারেশন করতে গেলে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হবে। অপারেশন হবে খুবই চমৎকার। আপনি টেরও পাবেন না,  এত সুন্দর ভাবে আপনার অপারেশন হবে এবং লেজার ট্রিটমেন্ট করে দেয়া হবে যাতে আর কোন দিন আপনার গলব্লাডার বা কিডনিতে স্টোন ডেভলপ না করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনার কাছে আছে মাত্র ছাব্বিশ হাজার পাঁচ শত টাকা। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো সমাধানটি আপনার জন্য নয়। পাঠকদের অনেকেরই উপযোগ তত্ত্বের নিরপেক্ষ রেখা সম্পর্কে ধারণা আছে। নিরপেক্ষ রেখার প্রত্যেক বিন্দুতে উপযোগের পরিমাণ সমান। অনেকগুলো নিরপেক্ষ রেখা নিচ থেকে উপরের দিকে সাজালে তখন এটাকে বলা হয় নিরপেক্ষ ম্যাপ।

সেখানে আইসি-১, আইসি-২, আইসি-৩ থেকে একেবারে 'আইসি-আসমান' পর্যন্ত নিরপেক্ষ রেখা থাকতে পারে‌ । প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ রেখার উপরের  নিরপেক্ষ রেখার যে কোন বিন্দুতে নিচের রেখার যে কোন বিন্দু অপেক্ষা উপযোগের পরিমাণ বেশি। আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই ম্যাপের মধ্যে কোন নিরপেক্ষ রেখাটি আপনার পছন্দ, অবশ্যই আপনি 'আইসি-আসমান' রেখাটি পছন্দ করবেন। এক্ষেত্রে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের  অপারেশন করাটি আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হবে।  কিন্তু আপনার একটা বাজেট লাইন আছে । আর সেটা হচ্ছে ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। অতএব পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো সমাধানটি আপনার জন্য নয়। আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধানটি  হয়তো ভালোর ক্রমধারায় তালিকার এগারতম সমাধান; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অপারেশন করানো। হাজার বিশেক টাকার মধ্যে এটা হয়ে যাবে। তাছাড়া বিশ্বমানের দেশের সেরা সার্জনরা এখানেই আছে। 

শেষ পর্যন্ত আপনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অপারেশনটি করাবেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে,  আপনাকে অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে, ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে, আপনার স্ত্রী যদি আপনার সাথে হাসপাতালে থাকে তাহলে আপনার বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য আপনার শাশুড়িকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসতে হবে ( আমেরিকা প্রবাসী দম্পতিদের নিকট শাশুড়ি মা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করে। বাচ্চা দেখার জন্য একজন সুস্থ শাশুড়ি থাকলে, বিশেষ করে বিধবা হলে,  উনাকে নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। একাধিক প্রবাসী ভাই বোনের মধ্যে। আপনার শাশুড়ির যদি গ্রীনকার্ড করে নিতে পারেন তাহলে আপনাকে  বাইরে গিয়ে কোন কাজ করতে হবে না। বৃদ্ধা শাশুড়ি বাসায় আছে, আর নিজের শ্বাশুড়ীর সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য আপনি একটি ভাতা পেয়ে যাবেন)। এগুলো সবই করবেন অপারেশনের পরিকল্পনা হিসেবে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও আপনার অপারেশনের জন্য একটা পরিকল্পনা করবে। নির্দিষ্ট দিনে এবং সময়ে কে আপনার অপারেশন করবে,  অপারেশন টিমের নেতৃত্বে কে থাকবে,  এনেসথেসিস্ট কে হবে,  পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার কার দায়িত্বে থাকবে, ইত্যাদি । এগুলো সবই পরিকল্পনার অংশ। নির্দিষ্ট সময়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের বারান্দায় রক্ষিত  ট্রলিতে আপনাকে শুয়ে পড়তে হবে। তারপরে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে অপারেশন থিয়েটারে। ইম্প্লেমেন্টেশন বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। "অপারেশন সাকসেসফুল"। সিনেমা এবং নাটকে দেখেছি রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে টেনশন নিয়ে পায়চারি করতে থাকে। ডাক্তার এক ফাঁকে পর্দা সরিয়ে বলে যায় "অপারেশন সাকসেসফুল"। আপনার অপারেশনও সাকসেসফুল,  কিন্তু আর একটা আজ বাকি। সেটা হচ্ছে 'কন্ট্রোল' । 

'কন্ট্রোল' শব্দটাও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বহুল ব্যবহৃত শব্দ।  দিনে অন্তত কয়েক বার এই শব্দটি আমরা ব্যবহার করি। যেমন পানি কন্ট্রোল, বিদ্যুৎ কন্ট্রোল, বার্থ কন্ট্রোল, স্বামী কন্ট্রোল, ইত্যাদি।  তবে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের কন্ট্রোলের সাথে ম্যানেজারিয়াল কন্ট্রোল এর কোন সম্পর্ক নেই। ম্যানেজারিয়াল কন্ট্রোল হচ্ছে 'মিলিয়ে দেখা' অর্থাৎ যেভাবে কাজটি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেভাবেই কাজটি সম্পন্ন হলো কিনা । না হয়ে থাকলে কেন হল না। গ্যাপের কারণ কি তা নির্ণয় করে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়া। আমি অনেক সময় বলি কন্ট্রোল হচ্ছে,  'second  X-ray done by orthopaedic surgeon' অর্থাৎ কন্ট্রোল হচ্ছে অর্থোপেডিক সার্জনের দ্বিতীয় X-ray এর মত। পাঠকদের মধ্যে যাদের হাত-পা ভেঙেছে তারা বিষয়টা আগেই বুঝেছেন, এজন্য তাঁদেরকে  অভিনন্দন । ২০১০ সালের কথা, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ,  কোষাধ্যক্ষের বাংলোতে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে আমার পা ভেঙে যায় (ফাটল),  কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাটি রাষ্ট্র হয়ে যায়। ট্রেজারারের পা বলে কথা। ঢাকা মেডিকেলের অর্থোপেডিক ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান অধ্যাপক শাহীন কুমিল্লা যাওয়ার পথে আমার পা ভাঙ্গার খবর পেয়ে অর্ধেক পথ থেকেই ফিরে আসে। আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। বাসায় বসেই শাহিন প্লাস্টার করে দিয়ে যায়। তিন সপ্তাহ পা টানা দিয়ে থাকতে হবে। সারাক্ষণ লোকজন ট্রেজারারের ভাঙ্গা দেখতে আসে। যেহেতু ভাঙ্গা পা নিয়ে ডুপ্লেক্সের দোতালায় ওঠানামা করা সম্ভব নয়, ভিজিটরদের সহানুভূতি জানানোর সুবিধার্থে আমি নিচ তলায় থাকতে লাগলাম। কয়েকজন ছিল যারা প্রতিদিন আসতো, কেউ কেউ দিনে দুই বারও আসত। আমার স্ত্রী ওদেরকে কিছু না বললেও বিরক্ত হয়ে আমার নিকট এদেরকে 'পা ছাটা' বলেছিল।  ঘটনাটির তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে আমার এমবিএ ক্লাসের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাতে এসেছিল। কারণ ঘটনার কয়েকদিন আগেই ক্লাসে নাকি আমি কন্ট্রোল পড়াতে গিয়ে যাদের হাত পা ভেঙেছে তাঁদেরকে কন্ট্রোল বিষয়টা ভালভাবে বুঝার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। অতএব আমার পা ভাঙ্গার খবর পেয়ে আমার ছাত্রছাত্রীরা আমাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছিল। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ক্রীড়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক তৌহিদ স্যার আমাকে একটা চিঠি পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন,  "খেলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের পা ভেঙেছে, এর চেয়ে গৌরবের বিষয় আর কি হতে পারে।  এমন  sporting ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয় কপালে জোটেনি" ।

এই উপমহাদেশের সেরা অর্থোপেডিক সার্জনদের একজন অধ্যাপক রুহুল হকের (সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী) নিকট  পা ভাঙ্গা এক রোগী নিয়ে আমি গিয়েছিলাম। উনি রোগীর দিকে তাকালোও না। একটি সাদা কাগজে লিখে দিলেন- "এক্সরে"।আসলে অর্থোপেডিক সার্জন প্রথম এক্সরেটি করে, দেখার জন্য,  কোন জায়গাটা ভেঙেছে। পুরো এক্সরে পর্যালোচনা করে সে একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিভাবে জোড়া লাগাতে হবে। এক্সরে রিপোর্ট বিশেষ করে প্লেটটি একটা সাদা নিয়ন বাতির সামনে রেখে সে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং সে অনুযায়ী অপারেশন করে স্ক্রু দিয়ে অথবা পাত দিয়ে ভাঙ্গা হাত পা জোড়া লাগায়। তারপর  প্লাস্টার করে দেয় এবং বলে, "দুই সপ্তাহ পরে আবার আসবেন"। কোন কোন ক্ষেত্রে জটিল অপারেশন হলে বলে, "তিন দিন পর আবার আসবেন"। দ্বিতীয় বার গেলে প্লাস্টার অক্ষত রেখে প্লাস্টারসহ আরেকটা এক্সরে করে। দ্বিতীয় এক্সরেটি করা হয় দেখার জন্য জোড়া যেভাবে লাগাতে চেয়েছিল সেভাবে লেগেছে কিনা। না লাগলে প্লাস্টার খুলে এবং টানাটানি করে আবার জোড়া লাগায় অর্থাৎ কতগুলো সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে; এটাই আসলে নিয়ন্ত্রণ।

পর্ব-১

লেখক: অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কলাম এর পাঠক প্রিয়