শিরোনাম
আপনাদের মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন? না-কি অসংখ্য ঘটনার ঘনঘটায় হারিয়ে ফেলেছেন? পদ্মা সেতু নির্মাণে মাথা লাগবে এই বলে ২০১৯ সালে সারাদেশে গুজব ছড়ানো হয়েছিলো। গুজবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো গোটা দেশ। সেই গুজবে সারাদেশে ২১ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছিলো। আর সেই গণপিটুনিতে সারাদেশে মোট পাঁচ জন মানুষ নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছিলো সেই বছরের ২০ জুলাই বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে দুই শিশু সন্তানের মা তাসলিমা বেগম রেনুকে গণপিটুনি দিয়ে নির্মম, নির্দয়ভাবে হত্যার ঘটনা। রেনু হত্যার সেই ভয়াবহ ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো।
অভাগা রেনু গিয়েছিলো সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতে কিন্তু গুজবকারীরা তাকে ছেলেধরা আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। রেনুর শত আকুতি নির্দয় হত্যাকারীদের মন গলাতে পারেনি। রেনুকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে হত্যা নিশ্চিত করা হয়েছিলো। সেই নিষ্ঠুরতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে রেনুর জন্য হাহাকার ও নিন্দার ঝড় ওঠে। ওঠে বিচারের দাবি।
পদ্মা সেতুর জন্য প্রাণ দিয়েছে রেনু। বেঁচে আছে তার দুই শিশু সন্তান। সেই সঙ্গে প্রাণ দিয়েছে আরো চারজন। গণপিটুনি খেয়ে ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে আছে আরও অনেকে। সব ঘটেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জন্য।
সব প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। উদ্বোধনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। এমনকি যারা পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলো। টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলো। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ করে শেখ হাসিনা সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলো। সেই মিথ্যা অভিযোগকারী, ষড়যন্ত্রকারীরাও অছেন বিশেষ সম্মানিত অতিথির তালিকায়। কিন্তু অভাগা রেনুসহ যারা পদ্মা সেতুর জন্য প্রাণ দিয়ে গেলেন তাদের পরিবারের কারো নাম রয়েছে এমনটা এখনো পত্রিকা বা টিলিভিশনের খবরে দেখলাম না।
টকশো’তে যারা খালেদা জিয়া এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ দেওয়ার জন্য গলা ফাটাচ্ছেন তাদের মুখেও একবারের জন্যও এই অভাগা রেনুদের কথা শুনলাম না। কেন? যে রেনু পদ্মা সেতুর জন্য প্রাণ দিয়ে গেলো। সেই অভাগা রেনুর দুই শিশু সন্তানকে কী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো যেত না?
এমন দাবি উঠা উচিত, রেনুর দুই সন্তানকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি করা হোক। এবং আরো যারা পদ্মা সেতুর জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের পরিবারকেও আমন্ত্রণ জানানো হোক।
এছাড়াও আরো যারা গণপিটুনিতে প্রাণে বেঁচে গেছে তাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে, রাষ্ট্র হিসেবে আমরা নিজেদের মহানুভবতার পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে পারতাম।
লেখক: সাংবাদিক