নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ : তৈমূর

ফানাম নিউজ
  ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৩৬

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ১৬ ডিসেম্বর বিএনপির বিজয় শোভাযাত্রায় আমি রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে যাইনি। অথচ, সরকারি দলের প্রার্থী এমপিদের নিয়ে একের পর এক সমাবেশ করে যাচ্ছে। তারা আমাকে আমার কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে তিনটি অভিযোগ দিয়েছি। তোরণ নির্মাণ ও সড়ক দখল করে প্রতীক স্থাপন করা আচরণবিধির লঙ্ঘন। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল তারা তোরণ ভেঙে দিবে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এ ছাড়াও অন্যান্য আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারেও বারবার অবহিত করা হয়েছে। তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছে, কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। জনগণের মনের ধারণা নির্বাচন কমিশন একটা ঠুঁটো জগন্নাথ। তারা সেই পথেই হাঁটছেন। তারপরেও আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই। সূত্র: আরটিভি

নির্বাচনপূর্ব এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে তিনি এ কথা বলেন।

তৈমূর বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হোটেলগুলো চেক করলেই দেখতে পারবেন বিভিন্ন জেলার সরকার দলীয় নেতারা এখানে অবস্থান করছে। সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলোকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনানুসারে সরকারি কোনো গাড়ি কিংবা ডাকবাংলো ব্যবহার করার নিয়ম নেই। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই আমাদের সরকারি দলের মেহমানরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক তার কিছু সঙ্গী নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপ করেছেন। তিনি অবশ্য বলেছেন, তিনি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে যাননি। কিন্তু তার বক্তব্য ও দেখা করতে যাওয়ার সঙ্গে কোনো সমন্বয় নেই। প্রথমত তিনি নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। তিনি নারায়ণগঞ্জের নাগরিকও না। এটা আইনগতভাবে আমি অন্যায় মনে করি। তিনি জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন। এটা একজন উচ্চপর্যায়ের সম্মানিত নেতার কাছ থেকে আমরা আশা করি না।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জনগণ সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমি বাংলাদেশের যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রত্যাশা করে, আপনি এ দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক হয়ে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন, স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে করার জন্য ব্যবস্থা নেবেন। নারায়ণগঞ্জে যদি ব্যালটের মাধ্যমে আশার প্রতিফলন ঘটে, এতে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে অনেকগুলো অভিযোগ করেছিলাম। সে অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বরং সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের চাহিদার কারণেই আমি নির্বাচনে এসেছি। পক্ষান্তরে আমাকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিভিন্ন উপাধি দিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। আমি আমার কোনো প্রার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য রাখিনি এবং ভবিষ্যতেও রাখব না।

তিনি বলেন, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমি নাকি বসে পড়ব। বসে পড়ার জন্য নির্বাচনে নামিনি। নির্বাচন করার জন্য নেমেছি। আমি একটা দল করি। আমি বিএনপির একজন সক্রিয় সদস্য। এই দলের জন্য রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। মিডিয়াতে দেখেছেন পুলিশ কতবার শারীরিকভাবে নির্যাতিত করেছে। তখন আমি দলের ক্যান্ডিডেট ছিলাম। নেত্রীর নির্দেশে আমি সরে দাঁড়াই। আজ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করিনি কেন আমাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। কারণ, আমি মনে করি, আমি দল করি, দলের প্রতি আমার অনুগত থাকা দরকার। তাই আমি দলের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নারায়ণগঞ্জের একটি সভায় বলেছিলেন, একজন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এবং আরেকজনকে পরাজিত করতে আমরা তৈমূরকে বসিয়েছি। সেটাও আমি মাথা পেতে নিয়েছি। ২০১৬ সালে আমাকে মনোনীত করা হলেও আমি নির্বাচন করিনি। শহরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের জন্যেই আজ আমাকে নির্বাচনে নামতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া কোনো হকারের পেটে লাথি দেওয়া যাবে না, কারও ছাদ কেড়ে নেওয়া যাবে না। মৌলিক চাহিদার ওপর পৃথিবীতে কোনো আইন নেই। নারায়ণগঞ্জের জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে চলবে, হকাররাও পুনর্বাসিত হবে। শহরে যানজট থাকবে না।