শিরোনাম
দরবেশ আতঙ্কে দীর্ঘ ১৬ বছর পতনে নিমজ্জিত ছিল দেশের শেয়ারবাজার। হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে। বাজারকে পতন থেকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরাতে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করলেও সব সাপোর্ট ভেঙে শেয়ারবাজারের সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নীচে নেমেছে। এর ফলে শেয়ারবাজার দীর্ঘ চার বছর পিছনের অবস্থানে চলে গেছে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ১৪৯ পয়েন্ট কমেছে। যা বর্তমান মাকসুদ কমিশনের আমলে সর্বোচ্চ পতন। এর আগে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৮ আগস্ট ডিএসইর সূচক ১২৫ পয়েন্ট কমে। যা গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এটিই ছিল মাকসুদ কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ে সর্বোচ্চ পতন।
মাকসুদ কমিশন বিএসইসির দায়িত্ব গ্রহণের পর শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরাতে দফায় দফায় স্টেকহোল্ডার থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে যাচ্চেন। এতেও কাজ হচ্ছে না। সবশেষ রোববার (২৭ অক্টোবর) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্ট হয়।
ডিএসইর আজকের বড় পতনের মাধ্যমে সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নীচে নেমে যায়। আজকের পতনের কারণে ডিএসইর এই সূচক চার বছর আগের অবস্থানে নেমে গেছে। এর আগে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর সূচকটি আজকের অবস্থানে ছিল। অর্থাৎ শেয়ারবাজার চার বছর আগের অবস্থানে নেমেছে।
বাজারের এই পতনে হাহাকার দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতন আর বড় বড় পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হয়ে গেছে। তারা আজ পথের ফকিরে পরিণত হয়েছে।
শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। অনেক বিনিয়োগকারী প্রাণও দিয়েছেন শেয়ারবাজারে তাদের পুঁজি হারিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মাথায় শেয়ারবাজারে দীর্ঘ ১৬ বছরে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করতে বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। বিনিয়োগকারীদের আপত্তি করলেও খন্দকার রাশেদ মাকসুদকেই আস্থা রাখে সরকার। তবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শেয়ারবাজার আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
সর্বশেষ সরকারের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীরাও খন্দকার রাশেদ মাকসুদের প্রতি বিশ্বাস ছিল শেয়ারবাজারে তিনি স্থিতিশীলতা ফিরাতে সক্ষম হবেন। তাদের ধারণে ছিল বাজার আর কখনোই ৫ হাজার পয়েন্টের নীচে নামবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের সেই বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত আর রইল না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহুর্তে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা। শুধু শেয়ারবাজার না নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ মার্কেট মেকার, ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিও বিনিয়োগকারীরা তাদের আস্থা হারিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামূখী চেষ্টার পরও প্রতিনিই নি:স্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও শেয়ারবাজার উন্নয়নে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফোর্সসেল। শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনে বেশকিছু শীর্ষ সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের নিজেদের টাকা তুলে নিতে মার্জিন অ্যাকাউন্টের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই ফোর্সসেলের কারণে শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ পড়ছে। এতে পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার । অন্যদিকে সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েই ফোর্সসেলের রাস্তা বেছে নিয়েছেন। তবে এর থেকে বের হতে প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ এবং যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত।
রোববারের বাজার পর্যালোচনা
আজ (২৭ অক্টোবর) ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১৪৯.২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ‘ডিএসইএস’ ৩৬.২৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১০৭ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৪৮.১৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আজ ডিএসইতে ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছে ৩০৬ কোটি ০১ লাখ ৩১ হাজার টাকার।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, কমেছে ৩৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির।