বাঁচানো গেল না চিকিৎসক সামিনাকে

ফানাম নিউজ
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:১৪

চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জীবনের ওপারে চলে গেলেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ম্যানেজমেন্টের চিকিৎসক ডা. সামিনা আক্তার (৪৭)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। এক ছেলে ও এক মেয়ের মা সামিনার মৃত্যু কাঁদাচ্ছে স্বজনদের। দুপুরে তার লাশ শহরের মেহেদীবাগের বাসায় আনার পর স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।

মঙ্গলবার রাতে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন ডা. সামিনা। কাজীর দেউড়ি হোটেল র‌্যাডিসন ব্লুর সামনে এলে তার রিকশায় পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এতে রিকশাসহ উল্টে রাস্তায় পড়ে যান সামিনা। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সিসিটিভি ফুটেজে দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখা যায়।

চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ডা. সামিনার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর তার মাথায় অপারেশন করা হয়। তাকে ছয় ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছিল। মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাওয়া আঘাতগুলো বেশ মারাত্মক ছিল। এর মধ্যে মাথার আঘাত খুবই গুরুতর। এক দফা অপারেশন করা হলেও সামিনার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বুধবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম শহরের মেহেদীবাগ প্রধান সড়ক থেকে শহীদ মির্জা লেনে ঢুকে চারটি ভবনের পরে ‘রাশ হাউজ’। এই রাশ হাউজের তিন তলায় থাকতেন ডা. সামিনা আক্তার। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত স্বজন-শুভার্থীদের ভিড়। স্বজনরা কান্নাকাটি করছেন। কেউ কেউ হাউমাউ করে বিলাপ করে কাঁদছেন। সহকর্মী ও আত্মীয়স্বজন চোখের পানি ফেলছেন। মেধাবী চিকিৎসক সামিনাকে হারিয়ে পুরো শহীদ মির্জা লেন যেন শোকে মুহ্যমান।

ডা. সামিনা আক্তারের এক মেয়ে (রাফা ওয়ালিয়া) ও এক ছেলে (মীর ওয়ালিফ) রয়েছে। তার সাবেক স্বামী মীর ওয়াজেদ আলী। তিনিও একজন চিকিৎসক। ১৫ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও কয়েক বছর আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে স্বামী আরেকটি বিয়ে করলেও সামিনা আর বিয়ে করেননি। সন্তানদের নিয়েই থেকে যান। ছেলেমেয়েরা বা-মা দুজনের সঙ্গেই থাকত।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ সিএনজি অটোরিকশাটি আটক করে। গ্রেফতার করে সিএনজিচালক সিদ্দিকুর রহমানকেও। এ ঘটনায় ডা. সামিনার বড় ভাই বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। নগরীর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) এমবিবিএস পঞ্চম ব্যাচের ছাত্রী সামিনা আক্তার। বছর কয়েক আগে তিনি ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে যোগ দেন।

ডা. সামিনা আক্তারের সাবেক স্বামী মীর ওয়াজেদ আলী বলেন, সামিনা ভালো চিকিৎসক ছিলেন। আইসিইউতে তিনি কত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন। আজকে তাকে বাঁচাতে পারলাম না। এ ধরনের বেপরোয়া গতির গাড়ির চালকদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সেটাই প্রত্যাশা করছি।

সূত্র: যুগান্তর