শিরোনাম
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হয়েছেন নিরঞ্জন দাশ (২৪) নামে এক এপিবিএন পুলিশ সদস্য।
এ সময় তার শার্টের পকেটে একটি ছুরি, একটি জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি পুলিশি পরিচয়পত্র ও একটি মানিব্যাগ পাওয়া যায়।
গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রোডের পেছন থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিরঞ্জন দাশ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর মেঘেরকান্দি এলাকার রতীম দাশের ছেলে। তিনি ১৪ এপিবিএন-এ কনস্টেবল হিসেবে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বলে নিশ্চিত করেছেন ১৪ এপিবিএন পুলিশ সুপার নাঈমুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বিকালে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রোডের পেছনের গলিতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ আসেন নিরঞ্জন দাশ। ওই চিপা গলিতে ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প হাকিমপাড়ার এক রোহিঙ্গা যুবকের কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ে মোবাইল ছিনতাই করার চেষ্টা করেন।
তাৎক্ষণিক রোহিঙ্গা যুবক আশপাশের স্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে এনে বিষয়টি বোঝান। সঙ্গে সঙ্গে ওই পুলিশের আচরণ সন্দেহজনক হলে তাকে আটক করে। এ সময় ভিড় লেগে যায়। পরে তাকে গ্রামপুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে উখিয়া থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, নিরঞ্জন দাশ পুলিশ পরিচয়ে এর আগেও বহু মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করেছেন। উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে তিনি মোবাইল ছিনতাই করে থাকেন।
স্থানীয় গ্রামপুলিশ রফিক উদ্দিন বলেন, কিছু দিন আগে নিরঞ্জন দাশ এক স্থানীয় লোকের মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে পুলিশ পরিচয়ে। যেটি আর পাওয়া যায়নি। তিনি একটি অটোরিকশা ভাড়া করে তেলখোলা, হাকিমপাড়া, জামতলী, ময়নারঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকার রোডগুলোতে ঘুরে ঘুরে মোবাইল ছিনতাই করেন।
উখিয়ার ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি এনায়েত উল্লাহ্ বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি নিরঞ্জন দাশ একটি অটোরিকশায় তার কাছে আসে এবং তার মোবাইলটি দেখতে দিতে বলেন। মোবাইল দেখে নিরঞ্জন দাশ তাকে বিভিন্ন অপরাধমূলক গেমস ও অবৈধ টাকা আয় করার কথা বলে মোবাইলটি নিয়ে যায় ফাঁড়িতে যোগাযোগ করার কথা বলে।
এ সময় কনস্টেবল নিরঞ্জন দাশের বিরুদ্ধে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার অনেক ভুক্তভোগী ঘটনাস্থলে ভিড় করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের ভেতরে থেকে এ ধরনের দুষ্কৃতকারী সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে দেশের প্রশাসনের মান ক্ষুণ্ন করছে। এ ঘটনায় তার যথাযথ আইনি শাস্তি দাবি করছি। আমি এর আগেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রশাসন কর্তৃক হেনস্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তারা সেই অভিযোগ আমলে নিলে আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।
নিরঞ্জন দাশ ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ১৪ এপিবিএন পুলিশ সুপার নাঈমুল ইসলাম বলেন, নিরঞ্জন দাশ বিগত চার মাসের ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে যোগ দেননি। এ জন্য তাকে পর পর তিনটি নোটিশ করা হয়েছে। এর পর তিনি হাজির না হওয়ায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে, যা এখন তদন্ত চলছে।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাকে আটক করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান সুপার নাঈমুল ইসলাম।
সূত্র: যুগান্তর