শিরোনাম
দেশে ওমিক্রন শনাক্তের পর সংক্রমণ নিয়ে রাজশাহীতে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের ওপরে থাকছে শনাক্ত। এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। বিগত ১৫ দিনে করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভর্তি রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ে নতুন শঙ্কা প্রকাশ করে সচেতন থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব ও রামেকের আরটিপিসিআর ল্যাবে গত ২২ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন হাজার ৫৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৪ জন রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু আইসোলেশনে নজরদারি না থাকায় কার্যকরভাবে তা নিশ্চিত হচ্ছে না। এতে সংক্রমণের শঙ্কা আরও বাড়ছে।
রাজশাহীতে করোনার প্রথম ধাক্কা এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় করোনা পজিটিভদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও প্রতিটি থানা পুলিশ কাজ করতো। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) স্বাস্থ্য বিভাগও তাদের চিকিৎসারও খোঁজ নিতো। কিন্তু করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্তের পর রাজশাহীতে এত বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন যে তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না রোগীদের চিকিৎসারও।
রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, 'আমরা কোনও সিস্টেমের মধ্যে নেই। স্বাস্থ্যবিধি থেকে শুরু করে কোনও কিছুই মানা হয় না। প্রতি সেকেন্ডে করোনা বাড়ছে। যারা প্রতিরোধ করবে, তাদের দৃশ্যমান কোনও কার্যক্রম দেখছি না। এবার তো আক্রান্তদের মিনিমাম আইসোলেশন নিশ্চিত করতেও দেখছি না। এখন রাস্তাঘাটে ধরে দুই জনকে জরিমানা করে বলছে, আমরা করোনা মোকাবিলায় কাজ করছি। এভাবে তো করোনা মোকাবিলা হতে পারে না।'
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, এবার যাকেই টেস্ট করছি, তারই পজিটিভ। প্রচুর রোগী। আগে হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা গেলেও এবার সম্ভব হচ্ছে না।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, উপজেলা পর্যায়ে হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে আক্রান্ত হয়ে রোগী শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার তথ্য আমার কাছে নেই। বিষয়টা নিয়ে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা পর্যায়ের কমিটিতে আলোচনা করবো। তবে করোনা মোকাবিলায় এখন টিকা প্রয়োগেই জোর দিচ্ছি আমরা।
এদিকে, শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার মধ্যে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই জনই করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। একজনের বাড়ি রাজশাহী ও অন্যজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।
এদিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) আরটিপিসিআর ল্যাবে ১৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৪৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদিন রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ০৯ শতাংশ। যা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের দিন রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৮ শতাংশ। ৩ ফেব্রুয়ারি ৪১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ২৮ জানুয়ারি ৭৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
সংক্রমণ কেন বাড়ছে এমন প্রশ্নে রাজশাহী বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, মহামারির বৈশিষ্ট্যটাই এমন। একবার বাড়ে তো আবার কমে। একটা ঢেউয়ের শেষ হতে না হতে নতুন ঢেউয়ের আবির্ভাব। এই ঢেউ কখনও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়। আবার কখনও কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে একপর্যায়ে এটা কমতে থাকে। এবার করোনার নতুন ঢেউয়ে শুধু রাজশাহী নয়, পুরো দেশেই সংক্রমণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আর করোনার টিকা নিতে হবে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে অগ্রিম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেড বাড়ানো হয়েছে। তবে এই সংখ্যাটা খুব বেশি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে। এখন সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। একই সঙ্গে সদর হাসপাতালকে দ্রুত করোনার ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করেও তুলতে হবে।
করোনা প্রতিরোধে রাতের বিধিনিষেধের কার্যকারিতা নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, আসলে ফলপ্রসূর বিষয়টি নির্ভর করে সবার সহযোগিতার ওপর। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে একটা কমিউনিটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সবাই সহায়তা করলে নিশ্চয় ফল পাওয়া যাবে। সংক্রমণের তুলনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার অনেক কম। কিন্তু একটা জেলায় ৭১ পার্সেন্ট সংক্রমণের হার, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমরা খুবই উদ্বেগের সঙ্গেই বিষয়টাকে নিয়েছি এবং মনিটরিং করছি। সে জন্য দিনের বেলায় সরকারের অন্যান্য বিধিনিষেধের পাশাপাশি রাতের জন্য স্থানীয়ভাবে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, আমরা চাই না লকডাউনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক।
বিধিনিষেধ জোরদারের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল আরও বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে এখন থেকে দিনেও মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি ভালোভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সন্ধ্যা থেকে শহর এবং গ্রামে এই বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন