প্রতিবন্ধী লক্ষ্মী রায়ের বিস্ময়কর প্রতিভা

ফানাম নিউজ
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৫

লক্ষ্মী রায়, বয়স ১৫। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না, কানেও শোনে না। তাতে কী? সৃষ্টিকর্তা তাকে দিয়েছেন অসাধারণ, অতুলনীয় ও অদম্য মেধা। অভাব অনটনের সংসারে ভিড় জমিয়েছে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রথম সব পুরস্কার।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুজিববর্ষের লগো, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাশসহ অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের ছবি অংকনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছে সে।

মায়ের গর্ভ থেকে শিশু জন্মগ্রহণ করার পর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে মাকে মা আর বাবাকে বাবা বলে ডাকতে শুরু করে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। লক্ষ্মী রায়ের বেলায় এমনটা হয়নি। মুখে তার ভাষা নেই, শুনতেও পারে না। ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে।

তবে কথা বলতে না পারলেও তার আঁকা ছবি ঠিকই কথা বলে। চোখের দেখা যেকোনো মানুষের বা দৃশ্য অপকটে আঁকতে পারে সে।

লক্ষ্মী রায় দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৩ নম্বর মুর্শিদহাট ইউনিয়নের চাপাইতর গ্রামের মৃত শ্রী সুনীল চন্দ্র রায়ের ছেলে। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা শ্রীমতি মিনতী রানী ক্ষেত-খামারে কাজ করে অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। মা শ্রীমতি মিনতী রানীও কানে কম শোনেন। যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে।

নিজস্ব জায়গায় একটি মাত্র ঘর, তাও ঠিক করার মতো সামর্থ্য নেই তার। লক্ষ্মী রায়ের দাদা-দাদিও বেঁচে নেই। তারা দুই ভাই ও এক বোন।

লক্ষ্মী রায় সেতাবগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। সুন্দর ছবি আঁকে। যদিও ছবি আঁকার ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তার। যে বিদ্যালয়ে সে পড়ে সে স্কুলেও অভিজ্ঞ কোনো অংকন শিক্ষক নেই। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাঝে মাঝে দেখিয়ে দেয়। এটুকুই তার মূল শিক্ষা। তবুও চোখের দেখায় নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলতে পারে ছবি।

যেকোনো মানুষের ছবি সে এঁকে দিতে পারে। ইতোমধ্যে সে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি এঁকেছে।

এবারের মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে।

লক্ষ্মী রায়ের চাচি নিপা রানী বলেন, লক্ষ্মীর বয়স যখন ১২ বছর তখন তার বাবা মারা যায়। পরিবারে দাদা-দাদিও নেই। তার মা মাঠে কাজ করেন। তাদের ঘর করার মতো কোনো সামর্থ্য নেই। তারা খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করে।

সেতাবগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন জানান, লক্ষ্মী রায় বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী। বিদ্যালয়ে ভর্তি করার আগে তার বাড়িতে শিকলবন্দি অবস্থায় পাই। সে অবস্থায় আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। ভর্তি করার পর দেখি তার মধ্যে আর্টের প্রতি খুব আগ্রহ। তখন আমরা শিক্ষকরা আর্ট শেখানোর চেষ্টা করি।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এঁকে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করে।

সেতাবগঞ্জ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শামীম আজাদ বলেন, একসময় লক্ষ্মী রায় বাইরের আলো বাতাস দেখতে পেত না। আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর তার যে ভিতরের সুপ্ত প্রতিভা সেটা প্রকাশ পায়। তার মা খুব কষ্ট করে সংসার চালায়। তাদের যে একটি মাত্র ঘর সেটিও মেরামত করার মতো অর্থ তাদের কাছে নেই। সরকার যদি তাদেরকে একটা বাড়ি করে দিত তাহলে খুব ভালো হত।

বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছন্দা পাল বলেন, আমি তার বিভিন্ন প্রোগ্রামে আঁকা ছবি দেখেছি। সে খুব চমৎকার ছবি আঁকে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হলেও তার যে দক্ষতা আসলে প্রশংসনীয়। কোনো আর্টের শিক্ষক ছাড়াই সে যে ছবি আঁকে খুবই আর্শ্চযজনক।