ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ: কঠোর হচ্ছে যশোর প্রশাসন

ফানাম নিউজ
  ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০২

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কায় কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে যশোরের জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কঠোরতার পাশাপাশি জেলার শতভাগ নাগরিককে টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও যশোরে আরো ৩৫ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) গবেষকদল আশঙ্কা করছেন, এই জেলায় ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যশোর জেলা ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণের রেডজোনের মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে আরও ৩৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়।

গবেষক দলটি গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ১৯ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত সর্বোমোট ৪১ জনের (২৬ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী) নমুনার স্যাঙ্গার সিকুয়েন্সিং-এর মাধ্যমে ৩৫ জনের প্রাথমিকভাবে ওমিক্রণ শনাক্ত করে। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি জিনোম সেন্টারে তিন জনের নমুনার পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়।

যবিপ্রবির জিনোম সেন্টার থেকে জানানো হয়, ওমিক্রনে আক্রান্তরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে ঠান্ডা, গলাব্যথা, মাংশ পেশীতে ব্যথা, হালকা জ্বর রয়েছে। তবে এছাড়া অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ নেই।

যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, যদিও শনাক্তের বিচারে আক্রান্তদের এখনো গুরুতর উপসর্গ নেই। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে উদ্বেগের ধরণ বলে আখ্যায়িত করেছে।

যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ওমিক্রন খুবই দ্রুত সংক্রমণশীল। এ কারণে যশোর অঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৩০ শতাংশের অধিক নমুনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে।

এদিকে করোনার এই পরিস্থিতিতে সোমবার যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক মো. তজিমুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

এ প্রসঙ্গে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, করোনার সংক্রমণ রুখতে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ এবং শতভাগ ভ্যাকসিনেশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ নাগরিককে টিকা প্রদানের (প্রথম ডোজ) আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য গোটা জেলায় ম্যাস ভ্যাকসিনেশনের কার্যক্রম চলছে। ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি যশোর ঈদগাহ ময়দানে গণটিকা প্রদান করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধনের কপি আনলেই তাকে টিকা প্রদান করা হবে। আমাদের টার্গেট ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ টিকা প্রদান নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি প্রচারণার জন্য মাইকিং করা হবে। যাতে মানুষ আরও সচেতন হতে পারে। পাশাপাশি সরকারঘোষিত বিধি-বিধান অমান্য করলে শাস্তির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও জোরদার করা হবে।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে ঘোষিত বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালন নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক সকল স্কুল, কলেজ এবং কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে জেলা শিক্ষ অফিসারকে বলেছেন। কোনো কোচিং সেন্টার খোলা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মালিকের জেল-জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি মাস্ক পরিধানসহ বাস, রেস্টুরেন্টে টিকাসনদ রাখা এবং সবাইকে টিকা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ছাড়াও জেলার বাসিন্দা নিশ্চিত করার যেকোনো প্রমাণপত্র দেখালেই তাকে টিকার আওতায় আনা হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা মজুদ রয়েছে। আমরা চাই, শতভাগ মানুষকে টিকার আওতায় এনে করোনা মোকাবিলা করতে।

সূত্র: জাগো নিউজ