রেড জোনে থাকা দিনাজপুরে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

ফানাম নিউজ
  ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৫৫

বৈশ্বিক মহামারী করোনার রেড বা লাল অঞ্চলের তালিকায় রয়েছে দিনাজপুর জেলা। কিন্তু এই জেলায় স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ। শহরে ব্যাপক জনসমাগম ঘটছে, কিন্তু নেই শারীরিক দূরত্ব। আর মাস্কও ব্যবহার করছেন না ৭৫ শতাংশ মানুষ। এভাবেই চলছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত বিধিনিষেধের বাস্তবায়ন।

জেলায় স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অব্যস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফলে টিকা নিতে এসে প্রতিরোধের পরিবর্তে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে দিনাজপুর জেলায় আবারও বেড়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। গতকাল শুক্রবার নতুন করে ৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন (বৃহস্পতিবার) শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৭ জন। তার আগের দিন বুধবার করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ জন।

দিনাজপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র বাহাদুর বাজার মোড় ও স্টেশন রোডে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন শহরে আসা মানুষ। এদের অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক। মানুষের চলাচলও স্বাভাবিক। মার্কেটের দোকানগুলোতেও রয়েছে উপচে পড়া ভিড়।

বাহাদুর বাজার মোড়ের ফল ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে কেউ মানছে না। পুলিশের উপস্থিতি দেখে তাড়িঘড়ি করে মুখে মাস্ক লাগিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন অনেকে। তারপর দূরে গিয়ে তারা মাস্ক খুলে উন্মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

দিনাজপুর স্টেশন এলাকায় কথা হয় টিকিট নিতে আসা শিক্ষক মো. কায়সার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কে শোনে কার কথা। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বাজার স্টেশনসহ সব জায়গায় যে অবস্থা তা দেখে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। খুব দ্রুত কাজ সেরে সেখান থেকে বের হয়েছি।’

শহরের বাহাদুর বাজারে এবি ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড রেজাউল ইসলাম বলেন, কেউ মাস্ক পরছে না, প্রতি ৪ জনে ১ জন হয়তো মাস্ক ব্যবহার করছে। ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছি।

শনাক্ত সংখ্যা বিবেচনায় রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে দিনাজপুর। এখানে ১৫ হাজার ১৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

অপরদিকে চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা প্রদান করা হচ্ছে। একদিনে ১৪০০ স্কুল শিক্ষার্থীর প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শীতের মধ্যে সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। এতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর দুপুর ২টায় টিকা দিতে পেরেছে। এখানে কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এ টিকা প্রদান করা হচ্ছে। কারো যেন কোনো দায় নেই। এ বিষয়ে তারা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণে জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালিদ মোহাম্মদ জাকি এবং পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন নিজেও শহরে ঘুরে ঘুরে মানুষকে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন এবং বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করছেন।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকি বলেন, সারাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অনীহা, একস্থানের মানুষ অন্য স্থানে যাতায়াত, মাস্ক না পরাসহ বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি মাসের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। জেলায় গত বুধবার ৩৪ দশমিক ৫৬ এবং গতকাল বৃহস্পতিবার ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চললে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সূত্র: জাগো নিউজ