শিরোনাম
মরদেহের ময়নাতদন্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা করে থাকেন। তবে যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ নেই, সেসব জেলায় জেনারেল হাসপাতালগুলোতে ময়নাতদন্ত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সকল ময়নাতদন্ত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
গত একবছরে জেলার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালের মর্গে ৪৪১টি মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১৩টি মরদেহ ছিল আত্মহত্যার।
চিকিৎসাকরা জানিয়েছেন, হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনার মতো যেকোনো অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত করা হয়ে থাকে। মরদেহ উদ্ধারের পর প্রথমেই পুলিশ একটি সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর মরদেহের মৃত্যু সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য মর্গে ময়নাতদন্ত করতে পাঠানো হয়। মর্গে চিকিৎসকরা পুলিশের সেই সুরতহাল প্রতিবেদন দেখেন, প্রথমে মৃতদেহের বাহ্যিক অবস্থার বিশ্লেষণ করেন। সেখানে কোনো আঘাত বা ক্ষত আছে কিনা, ত্বক ও জিহ্বার রঙ ইত্যাদি দেখে প্রথম প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এরপর মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভারসহ শরীরের ভেতরটা যাচাই করে দেখা হয়। কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকলে সেটি কীভাবে হয়েছে, তা ভালো করে যাচাই করা হয়। এই কাজটি করতে গিয়ে মৃতদেহের নানা অংশ কেটে দেখতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এ সময় শরীরের নানা প্রত্যঙ্গও সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৪১টি মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বিষপানে আত্মহত্যার ১৫৮টি, ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা ১৫৫টি, বিভিন্ন ভাবে হত্যাকাণ্ডের ৫১টি, অজ্ঞাত ৪৯টি, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫টি, স্ট্রোকে মৃত্যুতে সন্দেহ ৬টি, পানিতে ডুবে ৬টি ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ না থাকায় কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্তের জন্য ৫ জন চিকিৎসককে নিয়োজিত রেখেছে। তাদেরকে সহায়তা করেন একমাত্র ডোম আশরাফুল ইসলাম সুমন। এছাড়াও তার দুইজন সহযোগী রয়েছে।
মর্গের ডোম আশরাফুল ইসলাম সুমন জানান, গত দেড় বছর যাবত আমি একাই ময়নাতদন্তের কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দুইজন ছিলাম, কিন্তু একজন অসুস্থ হওয়ায় তিনি অবসরে চলে যান। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, মর্গে প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা আছে। তবে মর্গের পাশে একটি শৌচাগার করে দিলে সুবিধা হতো।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ওয়াহীদুজ্জামান জানান, আসলে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত করে থাকেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কোনো মেডিকেল কলেজ নেই। ফরেনসিক বিভাগ না থাকায় আমাদের চিকিৎসকরা এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু তারা একজনও এই কাজের জন্যে সার্টিফাইড নন। এনিয়ে আমাদের চিকিৎসকদের বেগ পেতে হচ্ছে। যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন সেখানে ফরেনসিক বিভাগে এই ময়নাতদন্তগুলো করা হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ