শিরোনাম
বিদায় নিয়েছে ২০২১। এই বিদায়ী বছরে অনেক ঘটনায় আলোচিত ছিল নারায়ণগঞ্জ। তার মধ্যে অন্যতম ছিল হেফাজত নেতা মামুনুল কাণ্ড। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে তাকে নারীসহ অবরুদ্ধের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিল। ওই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিলেন মামুনুল অনুসারীরা।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ খবর আসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর রুমে এক নারীসহ অবস্থান করছেন হেফাজতে ইসলামের বর্তমান বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক। আর এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকজন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা রয়েল রিসোর্টে গিয়ে মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন। সেইসঙ্গে তাকে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে সোনারগাঁ পুলিশ প্রশাসনও আসে।
যদিও সেসময় মামুনুল হক বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবকাশযাপনে গেলে কিছু লোক তাকে নাজেহাল করে।’
এদিকে মামুনুল হককে অবরুদ্ধের ঘটনায় হেফাজতের একদল নেতাকর্মী, মাদরাসাছাত্র মিছিল নিয়ে রয়েল রিসোর্টের সামনে জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ভাঙচুর চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তখন মামুনুলকে কক্ষের ভেতর জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদসহ সোনারাগাঁ থানার কর্মকর্তারা তখন সেখানেই ছিলেন। আর তাদের সামনে থেকেই বিপুল সংখ্যক হেফাজত নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
চলে ধ্বংসলীলা
মামুনুল হককে অবরুদ্ধের ঘটনায় অনুসারীরা এসে মূল গেটসহ পুরো রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সরগরম হয়ে ওঠেন হেফাজতের সমর্থকরা। মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ অফিস, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে। পুরো সোনারগাঁজুড়ে আতঙ্ক নেমে আসে।
মামলা দায়ের
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি ও সাংবাদিক একটি মামলা করেন। তার কিছুদিন পর স্থানীয়রা আরো তিনটি মামলা করেন। ৬টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মামুনুল হককে।
পরে ৩০ এপ্রিল সকালে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলা করেন ওই নারী। যাকে মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছিলেন।
বিচার কাজ শুরু
গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রকিবুদ্দিন আহমেদ ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রদান করেন। সেইসঙ্গে তার বিচার কাজ শুরু হয়।
চলছে সাক্ষগ্রহণ
বর্তমানে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। গত ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সবশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাকিবুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, এদিন মামুনুলের বিরুদ্ধে রয়েল রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ, রিসিপশন অফিসার নাজমুল ইসলাম অনিক ও আনসার গার্ড রতন বড়াল সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
আর এই সাক্ষ্য গ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করা হয়। আদালতের প্রবেশ ফটকে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ ও চেক করে প্রবেশ করানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। সাক্ষ্য শেষে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র: জাগো নিউজ