শিরোনাম
কক্সবাজার পর্যটন এলাকা ঘিরে সক্রিয় অন্তত তিন শতাধিক সন্ত্রাসী। এদের কেউ মাদকের ডিলার। আবার কেউ পেশাদার কিলার। আছেন অবৈধ অর্থ পাচার বা হুন্ডির কারবারিও। নারী পর্যটকের আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের জেরে হালনাগাদ করা হচ্ছে এসব সন্ত্রাসীর তালিকা। সেটি ধরেই বিশেষ অভিযানের লক্ষ্যে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো প্রস্তুতি।
তবে সন্ত্র্রাসীদের অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে বেপরোয়া। ফলে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তাদের অবাধ চলাচল ছিল অনেকটাই চোখ সওয়া। এমনকি একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পরও গা করেনি প্রশাসন। বেশ কজন ডাকসাইটে সন্ত্রাসীর সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের আঁতাতের অভিযোগ তো বেশ পুরনো।
খোঁজ চলছে : মিজানুর রহমান ওরফে সোনাইয়া ওরফে লম্বা মিজান। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ এবং ডাকাতিসহ গুরুতর অপরাধের মামলা ১৬টি। বাহারছড়ার বাসিন্দা রিদুয়ান আলী ওরফে সাজিন অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাকে কিছু বলার সাহস রাখে না কেউ। আর বাদশাগোনার সবুজ ওরফে সারোয়ার কামাল অস্ত্রের মুখে দখল এবং অপহরণে পারদর্শী। এরা প্রত্যেকেই কক্সবাজার পর্যটন এলাকার ত্রাস।
তবে নারী পর্যটকের ধর্ষণকাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের জড়সমেত তুলে ফেলতে ছক কষে মাঠে নেমেছে র্যাব। ইতোমধ্যে তালিকায় উঠেছে তিন শতাধিক নাম। তাদের খোঁজে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী তালিকায় নাম উঠেছে বাহারছড়ার বাসিন্দা মোবারক, পাহাড়তলীর আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলম ওরফে বালতি জাফর, কিশোর গ্যাং লিডার এহসানে।
এছাড়া পর্যটন এলাকার চুরি-ছিনতাইয়ের হোতা ১৪ মামলার আসামি মাসুদ ওরফে চোরা মাসুদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। র্যাবের তালিকায় নাম আছে ১৪ মামলার আসামি, সাজিম ওরফে মাস্তান সাজিম, লাইট হাউস এলাকার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ১৮ মামলার আসামি মাসুদ, নুনিয়া ছড়ার বাসিন্দা ওবায়দুল হক, নাজির হোসেনের ছেলে আসলাম ওরফে বেঈঙ্গা, দখলবাজ জয়নাল আবেদীন, সাদমান হোসেন ওরফে ইশরাক, দক্ষিণ বাহারছড়ার ১১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিনতাইকারী শিমুল, বাপ্পি, আরমান এবং কাননের।
এছাড়া টয়লেট আবছারের ছেলে রুবেল এবং পূর্ব বিল বাহারছড়ার বাসিন্দা সাদ্দাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে আছেন। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন তারা। সন্ত্রাসী হিসাবে তালিকাভুক্ত জিয়া উদ্দিন, সাহেদ, বিজয় দাশ এবং ইয়াবা ডিলার জিল্লু র্যাবের ভয়ে ইতোমধ্যে কক্সবাজার ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছে।
হট স্পট : স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটন এলাকায় সন্ত্রাসীদের দাপট ছাড়া শহরজুড়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য। এছাড়া আছে মাদকের হটস্পট। সহজলভ্য ইয়াবার নেশায় ডুবছে শিক্ষিত যুবকদের অনেকে। এমনকি মরণ নেশায় আসক্ত অসংখ্য তরুণ। তাদের অনেকের নাম উঠেছে পেশাদার অপরাধীর খাতায়। কেউ কেউ ব্যবহৃত হচ্ছেন রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটন নগরীতে ছিনতাই আতঙ্ক অনেকটা ছায়ার মতো ঘিরে। টার্মিনাল এলাকায় বাস থেকে নামলেই হ্যাচকা টানে ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই হচ্ছে অহরহ। এছাড়া বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাজারঘাটা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, হাসপাতাল রোড, সার্কিট হাউস মোড়, লালদিঘির পাড়, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী মোড়, পাওয়ার হাউস এবং বার্মিজ মার্কেট এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ভোরে এবং সন্ধ্যার পর শহর যেন নিরাপত্তাহীন। এ সময় আতঙ্ক সঙ্গী করে চলাফেরা করেন পর্যটকরা। কয়েকটি স্পটে দিনে একাধিকবার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অথচ অজ্ঞাত কারণে পুলিশের খাতায় ছিনতাইয়ের মামলা প্রায় শূন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জেলার বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য নবীন। ফলে স্থানীয় অপরাধের ধরন এবং অপরাধী সম্পর্কে বুঝে উঠতে সময় লাগছে তাদের। মেজর সিনহা মার্ডারের জেরে সাড়ে ১৫শ পুলিশ সদস্যকে বদলি করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পেশাদার এবং অভিজ্ঞ পুলিশ সদস্যদের জায়গায় যোগ দেওয়া নবাগতরা অভিযানে সফলতা পাচ্ছেন তুলনামূলক কম। এমনকি একের পর এক খুন হলেও আসামি গ্রেফতারে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ।
সন্ত্রাসীদের তালিকা ধরে অভিযান চলছে জানিয়ে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম সরকার বুধবার বলেন, মাঠ পর্যায়ে র্যাবের গোয়েন্দারা তৎপর। ধর্ষণকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না। কক্সবাজারকে অপরাধীদের অভয়ারণ্য হতে দেওয়া হবে না।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, পুলিশের অভিযান আগেও ছিল এখনো চলছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান নিয়মিতভাবেই চলছে। তবে আমরা ইংরেজি নববর্ষসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাথায় রেখে অবশ্যই এখন সতর্ক অবস্থানে আছি। আর নবীন পুলিশ সদস্যদের কারণে অভিযান বা অপরাধী কম গ্রেফতার হচ্ছে বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। বরং আগের থেকে এখন পরিস্থিতি অনেকটা ভালো-এমন কথাও কেউ কেউ বলেন।
সূত্র: যুগান্তর