শিরোনাম
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় পাঁচ শতাধিক স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৭ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। উপজেলার ৪৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বরাত দিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই এসব তথ্য জানিয়েছেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির ৮৭ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান খন্দকার। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীও রয়েছে।
এ ছাড়া বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫, নাওডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ৩০, ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৩৫ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। উপজেলার সব বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্য প্রতিবেদন আকারে জেলায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৭ জনের বিয়ের খবর পেয়েছি। তবে সবার বাড়িতে গিয়ে বিয়ের তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারও অভিভাবক, কারও সহপাঠী ও ভাইবোন এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পরিবার চরাঞ্চলের বাসিন্দা। দারিদ্র্যসীমার নিচে তাদের বসবাস। এর মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে। বিদ্যালয় খোলা থাকলে এত বাল্যবিয়ে হতো না।’
‘এসব শিক্ষার্থীকে কীভাবে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায় তার ব্যবস্থা করা এখন আমাদের প্রধান কাজ। ইতোমধ্যে বিবাহিতদের অনেকে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছে। আশা করছি, বাকিরাও বিদ্যালয়মুখী হবে’ যোগ করেন প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘উপজেলার ৪৩ মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৫২৩ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছি আমরা। তবে কমবেশি হতে পারে। সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। এসব শিক্ষার্থীর প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি যাতে বিদ্যালয়মুখী করা যায়, সে জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি।’
এদিকে, সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের ঘোগাদহ মালেকা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪০ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক।
চিলমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ১৯ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫৪ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘এখনও সব উপজেলার তথ্য হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমরা সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে কাজ করছি। সবগুলো উপজেলার তথ্য পেলে বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে শুরু করেছে। আশা করছি, শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা বাড়বে। তবে যেভাবে আশঙ্কাজনকহারে বাল্যবিয়ে বেড়েছে তাতে ভাবনায় পড়েছি। এটি প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’