শিরোনাম
পাবনার ঈশ্বরদীতে কলেজছাত্র নাঈমুল ইসলাম হৃদয় খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেফতার আসামি আবুল হাসনাত ওরফে হাসান (৩৮) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুলিশকে জানিয়েছেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে বন্ধু হৃদয় তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিলেও চাকরি দিতে পারেননি। পরে টাকা ফেরত দিতে গিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে বন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় তা বাস্তবায়ন করেন হাসান।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) আতিকুল ইসলাম আতিক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর গত সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়ার একটি বাড়ি থেকে হৃদয়ের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হৃদয় উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের নতুন রূপপর গ্রামের মজনু আলীর ছেলে এবং পাবনা এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গ্রেফতার ইসমাইল ওরফে হাসান (৪০) পাবনা পৌর সদরের পৈলানপুর এলাকার মৃত আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে।
হৃদয়ের বাবা মজনু আলী জানান, অপহরণের পর শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে একবার আমার ছেলের মোবাইল থেকে আমাকে কল করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণের দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। চারদিন পর তার মরদেহ পেয়েছি।
এসআই আতিকুল ইসলাম জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ অভিযান শুরু করে। মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে অপরাধীর লোকেশন জানতে পারে পুলিশ। কৌশলে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার শর্তে নিদিষ্ট স্থানে আসার পর হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে মরদেহের সন্ধান মেলে।
পুলিশ গ্রেফতার হাসানের বরাত দিয়ে জানায়, আসামি হাসানের সঙ্গে কয়েকমাস আগে থেকে হৃদয়ের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। হাসান রূপপুরে একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। পড়াশোনার পাশাপশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় তার এক ভাইয়ের বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। রূপপুর এলাকার মোবাইল ব্যবসায়ী হওয়ায় হাসানের সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। হৃদয় তার বন্ধু হাসানকে জানিয়েছিলেন ৮০ হাজার টাকা দিলে তাকে রূপপুর প্রকল্পে ভাল চাকরি দিয়ে দিতে পারবেন। সেই আশ্বাসে কয়েকমাস আগে হৃদয়কে ৮০ হাজার টাকা দেন হাসান। কিন্তু কয়েক মাসেও চাকরি দিতে না পেরে টালাবাহানা শুরু করেন হৃদয়।
এরই জেরে হৃদয়কে খুনের পরিকল্পনা করেন হাসান। সে মোতাবেক গত শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল নয়টায় পাকশী এলাকার একটি মেসে হৃদয়কে দেখা করতে বলেন হাসান। হৃদয় সেখানে এলে জুসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে তাকে খুন করা হয়।
পুলিশ গ্রেফতার হাসানের বরাত দিয়ে আরও জানান, হত্যার পর মরদেহ গুমের জন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে হৃদয়ের শরীর ১০ টুকরো করেন হাসান। এরপর মরদেহটি একটি ট্রাভেল ব্যাগে ভরে রাখেন। রাতে বের হয়ে কুষ্টিয়া-নাটোর মহাসড়কের নওদাপাড়ায় মহাসড়কের পাশে একটি বাড়িতে মরদেহ ভরা ট্রাভেল ব্যাগটি নিয়ে ঘরের মেঝেতে সেটি পুঁতে রাখেন। পরদিন শনিবার (১১ ডিসেম্বর) হৃদয়ের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে তার পরিবারের কাছে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন হাসান। বিষয়টি হৃদয়ের পরিবার পুলিশকে জানান।
পুলিশ ওই ফোন নম্বরটি ট্র্যাকিং করে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার কথা বলে নির্দিষ্ট একটি স্থানে ডেকে নিয়ে হাসানকে গ্রেফতার করে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, কলেজছাত্র হৃদয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গতকাল বুধবার পাবনা জেলা আমলী আদালতে আসামি হাসানের জবানবন্দি নেওয়া হয়। আদালত আসামিকে পাবনা জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ