শিরোনাম
প্রতিবেশী দেশ ভারত ও ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে স্থলবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দর। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
‘সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) ইন্টিগ্রেটেড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ২১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৮৭ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাকি অর্থ মেটানো হবে সরকারি কোষাগার থেকে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (পরিকল্পনা) রফিক আহম্মদ সিদ্দিক বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দর আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য স্থলবন্দর তিনটিকে ঢেলে সাজিয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য পাশে থাকছে এডিবি। সংস্থাটি আমাদের সহজ শর্তে ঋণ দেবে। আমরা প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ২৪টি স্থানে বর্ডার ক্রসিং পয়েন্টে (বিসিপি) স্থলবন্দর রয়েছে। বাংলাদেশের বিসিপিগুলোতে সমন্বিতভাবে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে সরকার প্রকল্পটি গ্রহণ করতে যাচ্ছে। তবে পর্যায়ক্রমে ঋণ দেবে সংস্থাটি। আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দরে ল্যান্ড কাস্টম সেকশনে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। স্থাপন করা হবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার ২৪টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে। এর মধ্যে তিনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বর্তমানে চলমান। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কানেকটিভিটি স্থাপন ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তার করার জন্য অন্য স্থলবন্দরের মতো এ বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। ২৪টি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে ১২টির কাজ চলমান। অবশিষ্ট ১২টি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালুর অপেক্ষায়।
ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ সাতটি রাজ্যে প্রবেশের অন্যতম দ্বার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন মাছ, পাথর, সিমেন্ট, ইট, বালি, শুঁটকি, প্লাস্টিক সামগ্রী, তুলাসহ প্রায় ৪২টি বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ স্থলবন্দর দিয়ে সারা বছরই ফল, কয়লা, পাথর, মসলা ও কৃষিপণ্য আমদানি হয়। এতে বন্দর অঞ্চলে গড়ে উঠেছে স্থানীয় বাজার। এই স্থলবন্দর কেন্দ্র করে অনেক লোকজনের সমাবেশ ঘটায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সব সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় কেন্দ্র হিসেবে স্থানীয়ভাবে কিছু হাটবাজারও রয়েছে। বর্তমানে এই স্থলবন্দরটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর।
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকেই চুনাপাথর ও বোল্ডার পাথর আমদানি করা হয়। ভুটান থেকেও কিছু বোল্ডার পাথর আসে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে স্থলবন্দরটি।
এজন্য নানা দিক বিবেচনা করে স্থলবন্দর তিনটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সূত্র: জাগো নিউজ