শিরোনাম
পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহতের ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৬ ডিসেম্বর এই ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আলম। এর আগে সকালে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৪০) নিহত হন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভাড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান এবং আনারস প্রতীকের প্রার্থী ইয়াসিন আলমের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু সাঈদ খানের সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে।
সকালে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সুলতান মাহমুদের সমর্থকরা নির্বাচনি প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। সংঘর্ষের মধ্যে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমকে কুপিয়ে আহত করা হয়। সেই সঙ্গে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন।
আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাদের মধ্যে ছয় জনকে রাজশাহী মেডিক্যালে নেওয়া হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে নাটোরের বনপাড়ায় মারা যান ইয়াসিন আলম।
আহতরা হলেন ভাঁড়ারা গ্রামের রিয়াদ হোসেন (২২), তুহিন আহমেদ (২৩), আব্দুর রহিম (৩৩), হোসেন আলী (৫০), রুবেল হোসেন (৩০), নলদহ গ্রামের আলেক শেখ (৪০), জসিম উদ্দিন (৩৫), আবু তালেব (৩২), তুহিন হোসেন (২৭), আব্দুল্লাহ (৩৫), লালু শেখ (৩৩), মোস্তফা (৪০) ও আল আমিনসহ (২৮) ২০ জন।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আমার হয়ে যারা প্রচারণা করেছেন, তাদের মধ্যে চার-পাঁচ জনের বাড়িতে গিয়ে সাঈদ চেয়ারম্যানসহ ১০-১৫ জন মিলে গুলি চালিয়েছেন। আমার হয়ে ভোট না করার হুমকি দেন। তখন থেকেই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। শনিবার সকালে আহতদের আমার সমর্থকরা দেখতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা চালায় এবং গুলি করে। এতে সংঘর্ষ লেগে যায়।’
আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খান বলেন, ‘গতকাল রাতে আমার লোকজন নৌকার ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বারকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করে। সকালে আমি তাকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে এলে সুলতানের লোকজন আমাদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় আমাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে তারা আমাকে হত্যা করতো। এ ঘটনায় আমার কয়েকজন সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়।’
সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার লোকজন ভোট চাইতে দিচ্ছে না। আমি আর ভোট চাই না, স্বজনদের প্রাণ ফেরত চাই।’
পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকন-উজ-জামান বলেন, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৫-২০ আহত হয়েছেন বলে জেনেছি। কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হামলায় জড়িত সন্দেহে অস্ত্রসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আলম বলেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হওয়ায় ২০১০ সালের ইউপি নির্বাচনি বিধিমালা অনুযায়ী ভাঁড়ারা ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ