শিরোনাম
পাবনার চাটমোহর রেলস্টেশনে চা বিক্রি করা মাজেদা বেগম এখন ইউপি সদস্য। উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ছয় বছর আগে তার স্বামী সোবহান শেখ মারা গেছেন। একজন বিধবা নারী চা বিক্রেতা থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ আনন্দ প্রকাশ করেছে।
মূলগ্রাম ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন মাজেদা। তিনি ২৮৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতেমা খাতুন পেয়েছেন ১৬০৭ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ১২৭১ ভোট।
নির্বাচিত হয়ে মাজেদা খাতুন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। এলাকাবাসী ভালোবেসে আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। তারা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। মানুষের এ ভালোবাসার প্রতিদান আমি দিতে চাই। বিশেষ করে গ্রামের অবহেলিত নারীদের পাশে থেকে আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে চাই।’
মাজেদা আরও বলেন, তার দুটি মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী সোবহান শেখ ছয় বছর আগে মারা গেছেন। সে সময় সন্তানদের নিয়ে প্রচণ্ড অভাবে পড়ে যান তিনি। প্রতিবেশীদের পরামর্শে মূলগ্রাম রেলস্টেশনের পাশে চায়ের দোকান দেন তিনি। চায়ের দোকানের আয় থেকেই তার খরচ চলে। তিনি জানান, সংসার চালানোর পরও সবসময়ই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।
মাজেদা বলেন, তার জীবনে আর কীই বা আছে চাওয়া-পাওয়ার। তার কোনো পিছুটানও নেই। তার চা বিক্রির ব্যবসা তিনি বন্ধ করবেন না। জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের সব কাজ শেষ করার পর তিনি তার স্টলে বসে চা বিক্রি করবেন।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নুরুল ইসলাম জানান, বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন সংগ্রামী নারী মাজেদা খাতুন। চা বিক্রি করে কীভাবে জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় তার নজির তৈরি করেছেন মাজেদা খাতুন। তার সাফল্যে তার এলাকার ও বাইরের লোকজনও খুশি।
মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রাশেদুল হক বকুল বলেন, এখানকার মানুষ সচেতন। তারা তৃণমূলের মানুষকে সহযোগিতা ও নারীর ক্ষমতায়নে দৃষ্টান্ত গড়লেন। আবার জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন বলেই মাজেদা বেগমের মতো হতদরিদ্র নারীও জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে সব সময় সহযোগিতা করবো।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে মাজেদা বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তৃণমূলের এই জীবন সংগ্রামী নারী কারও কাছে হাত না পেতে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এমন সংগ্রামী নারীর সাফল্যে সবার খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সূত্র: জাগো নিউজ