শিরোনাম
বিদ্যালয়টি তখন বেড়ার ঘর। চাকরি শুরু করলেন ইউনুচ আলী। পাকা করার সময় মাথায় করে ইটও টেনেছেন। এখানের শিক্ষকরা ছিল তার অভিভাবক, আর শিক্ষার্থীরা সন্তান। দীর্ঘ ৪৭ বছর ঘণ্টা বাজিয়েছেন এই বিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) স্কুলে নিজের কর্ম জীবনের শেষ ঘণ্টা বাজালেন। বিদায় বেলাতে অঝোরে চোখের পানি ফেলেন ইউনুচ আলী।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৩ বছর বয়সে কর্ম জীবন শুরু ইউনুচ আলীর। এখন তার বয়স ৬০ বছর।
অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি জানালেন, তার জীবনের সব স্মৃতি এই বিদ্যালয়কে ঘিরে। বিদ্যালয়কে ভালোবেসে সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। কখনও একটা কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যন্ত তাকে দেওয়া হয়নি বিদ্যালয় থেকে। আজ বিদ্যালয়ের সব ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের গ্রাম জালালপুর। এই গ্রামের শিক্ষানুরাগী বাসিন্দারা ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করে বিদ্যালয়টি। সেসময় পার্শ্ববর্তী মাধ্যমিক স্কুলগুলো ছিল অনেক দূরে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি তখন ছিল বেড়ার ঘরে। পরে পাকা ঘর তৈরি হয়।
বিদ্যালয়টি ১৯৮৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর এমপিও ভুক্তি হয়। আজ বিদ্যালয়টি নতুন নতুন ভবন রয়েছে। ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি করছেন। বিদ্যালয়ের দপ্তরি ইউনুচ আলী ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার শাখারীদহ গ্রামের মৃত ইয়ার আলী মণ্ডলে ছেলে। তার স্ত্রী, তিন মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।
ইউনুচ আলী জানান, জালালপুর গ্রামে তার মামা বাড়ি। বয়স যখন ১৩ বছর তখন মামা নূর আলী মণ্ডল তাকে ডেকে পাঠান। মামা বাড়িতে আসার পর জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাকে দপ্তরি হিসেবে চাকরিতে ঢুকিয়ে দেন মামা। সেই থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন ইউনুচ আলী।
তিনি আরও জানান, ১৯৮০ সালের পর বিদ্যালয়ে পাকা ঘর নির্মাণ শুরু হয়। সেসময় তিনি নির্মাণ কাজ দেখাশুনা করতেন। নিজেও মাথায় করে টেনেছেন ইট। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিজের করে নিয়েছেন।
ইউনুচ আলী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ৩০ শতক জমি কিনে সেখানে বাড়ি করেছেন। মাঠে ৩ বিঘা চাষযোগ্য জমি কিনেছেন। এছাড়া ছেলে-মেয়েকে করাচ্ছেন পড়ালেখা। বড় মেয়ে মেহের নিগারকে বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন পড়ছে অনার্সে। ছেলে মামুনুর রশিদ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে ইভা খাতুন এই স্কুলেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।
ইউনুচ আলীর এখন কষ্ট প্রাণের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে কোথায় যাবেন? বাকি সময়টা কীভাবে কাটবে? তিনি যখন প্রথম চাকরিতে যোগ দেন, তখন বিদ্যালয় থেকে পেতেন ৩০ টাকা। আর সরকার দিতো ৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এমপিও হওয়ার পর ১২০ টাকা বেতন পেতেন। বর্তমানে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা বেতন পেয়ে অবসরে গেলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. আক্তার জাহান জানান, ইউনুচ আলী অত্যন্ত হাসিখুশি মানুষ। সব শিক্ষকের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনিই এই প্রতিষ্ঠানে সবচে বেশি সময় চাকরি করেছন। বিপদ-আপদে তার তুলনা ছিল না।
প্রধান শিক্ষক আরও জানান, শেষ দিনে তিনি শেষ ঘণ্টাটি বাজিয়েছেন। পাশাপাশি ফুল ও উপহার সামগ্রী দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ