শিরোনাম
নিজ কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কুমিল্লা সিটির কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল ও সহযোগী হরিপদ সাহা। তাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরীর ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে। একদল হামলাকারী নগরীর পাথরিয়াপাড়া ও সুজানগর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে তারা শতাধিক বাড়ি-ঘর, অফিস ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এ সময় আতঙ্কে সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকায় শাহিনুর ইসলাম (৬০) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান বলে অভিযোগ উঠেছে। মারা যাওয়া শাহিনুর কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কর্মচারী।
এদিকে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বাদ জোহর পাথরিয়াপাড়া ঈদগাঁও মাঠে জানাজা শেষে পাথরিয়াপাড়া কবরস্থানে কাউন্সিলর সোহেলকে দাফন করা হবে বরে জানিয়েছেন স্বজনরা। এছাড়া তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে নগরীর টিক্কারচর মহাশ্মশানে দাহ করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কুমিল্লার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে প্রবেশ করে বুকে ও মাথায় ৯টি গুলি করা হয়। হত্যাকাণ্ডে পাঁচ থেকে আট জন অংশ নেন। তারা মুখোশ এবং মাথায় হেলমেট পরে মোটরসাইকেলযোগে এসে বৃষ্টির মতো গুলি চালান।
পুলিশ এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কাউন্সিলর সোহেলের অফিসে পাঁচ ব্যক্তি প্রবেশ করে আবার বেরিয়ে গেছে। তাদের সবার মুখে মুখোশ এবং মাথায় হেলমেট ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসক ও অর্থ) আব্দুর রহমান বলেন, কুমিল্লার কাউন্সিলর সোহেলসহ ডাবল মার্ডারের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
অন্যদিকে রাতে কাউন্সিলর সোহেলের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নগরীর পাথরিয়াপাড়া ও সুজানগর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, শতাধিক বাড়ি-ঘর, অফিস ও দোকানপাটে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় আতঙ্কে সুজানগর পূর্ব পাড়া এলাকার কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কর্মচারী শাহিনুর ইসলাম (৬০) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান বলে অভিযোগ উঠেছে।
শাহিনুরের বড় ছেলে মো. সানজিদ বলেন, রাতে কাউন্সিলর সোহেল মারা যাওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে একদল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা হাতে সুজানগরে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করে। সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও অফিস ভাঙচুর করেন তারা। হামলার সময় বাবা বাসায় ছিলেন। তিনি হামলা-ভাঙচুরের বিকট শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে কুমিল্লা নগরীর ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে, চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সিটি কাউন্সিলরকে হত্যার ঘটনায় পাথরিয়াপাড়া ও সুজানগর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পাথরিয়াপাড়া কাউন্সিলর সোহেলের কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় উৎসুক জনতার ভিড় অব্যাহত রয়েছে। তবে যেকোনও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকালে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রের পাথরিয়াপাড়া কার্যালয়ে একদল সন্ত্রাসী গুলি চালায়। এ সময় সিটি কাউন্সিলর সোহেলসহ আট জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল ও সহযোগী হরিপদ সাহা নামে দুই জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আহত অন্যরা হলেন জুয়েল (৪০), আউয়াল হোসেন রিজু (২৫), রাসেল (২৮), মাজেদুল হক, বাদল (২৫) ও সোহেল চৌধুরী।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন