শিরোনাম
ঝালকাঠিতে আরাফ ও আয়ান নামের ১৬ মাসের জমজ দুই ছেলেকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে গেলেন এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। স্বামী ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার দিচ্ছেন না এ অভিযোগে রোববার বিকেলে মা সুমাইয়া আক্তার সন্তানদের রেখে যান।
বর্তমানে শিশু দুটিকে ঝালকাঠি থানার নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়েছে। তাদের কান্নায় থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
থানা পুলিশ ও শিশুদের মা জানান, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় পুলিশ কনস্টেবল পদে কর্মরত। তিনি বর্তমানে প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থাকা চায়ের দোকানি মাহফুজ মিয়া বলেন, বিকেলে একজন নারী তার দুই শিশু সন্তানকে এসপি অফিসের চেক পোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক।’
এদিকে সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু দুটি কান্না করছে। এক নারী কনস্টেবল তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এসময় শিশু দুটির শরীরের তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি।
সুমাইয়া আক্তার মুঠোফোনে জানান, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশু আরাফ ও আয়ান ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিল। রোববার সকালে চিকিৎসকরা শিশু দুটির বিভিন্ন পরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় ছয় হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি কনস্টেবল ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সুমাইয়া আক্তার বলেন, তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যাই। কিন্তু প্রধান ফটকের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও মো. সুমন নামে দুই পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি। ওদের লালন-পালন করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু খরচ চালানোর মতো অবস্থা আমার নেই।
জানা যায়, ২০১৯ সালের মে মাসে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে চলতি বছরের মার্চ মাসে স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান ইমরান। নোটিশ পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করেন সুমাইয়া।
শিশু দুটির মায়ের দাবি, তালাক নোটিশ পাঠানোর আরও আগে থেকে তার এবং সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দেন না ইমরান।
এ বিষয়ে কনস্টেবল ইমরান মোবাইলে বলেন, প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য তিন হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজ নেই। কিন্তু মা হয়ে সে কীভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেল?
ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। শিশুদের দাদা-দাদিকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা আসলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।