পদ্মায় ফের ভাঙন, বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে পাড়ের মানুষ

ফানাম নিউজ
  ০২ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৫৭

রাজবাড়ী সদর উপজেলার পদ্মাপাড়ের গোদার বাজার এলাকায় মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে শহররক্ষা বাঁধে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। অনেক পরিবার গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ১২টি পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে। সূত্র: আরটিভি

মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া ভাঙনে ১৫০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের আতঙ্কে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পদ্মায় নদীর ভাঙন থেকে জেলা শহর তথা জেলাকে রক্ষার জন্য আশির দশকের শেষ দিকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পদ্মার নদীর তীর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য গত দুই বছর আগে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল।

প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৭ কোটি টাকা। ওই কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। এ ছাড়া একই এলাকায় ড্রেজিং করা হবে। ড্রেজিংয়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩৫ কোটি টাকা। কাজের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড। কাজ বাস্তবায়ন করছে মেসার্স দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। এই প্রকল্পের আওতায় গোদার বাজার এলাকায় দেড় কিলোমিটার সংস্কার কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি টাকা। পাঁচটি গুচ্ছে কাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছরের ৩১ মে।

চলতি বছরের বর্ষার শুরুতেই গত ২৭ জুলাই থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এরপর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে পদ্মার নদীর ব্লক দিয়ে সংরক্ষিত এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। ভাঙন শুরু হলে সেখানে বালুর বস্তা জিও ফেলা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, গোদার বাজার ঘাট থেকে পশ্চিম দিকে ১৫০ মিটার ভেঙে গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। বাড়িতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ঘরের মেঝের ইট তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাউবো ভাঙনকবলিত এলাকায় বস্তা ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত। উপজেলাগুলো হলো রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, পাংশা ও কালুখালী উপজেলা। এসব উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। প্রতিবছর সাধারণত পানি বাড়ার সময় ভাঙন দেখা দেয়। এ বছর আবার পানি কমতে শুরু কমার সময়েও ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রাম, একটি সরকারি স্কুলের পাকা ভবন, মসজিদ ও মাদরাসা বিলীন হয়ে গেছে।

ইজিবাইকচালক আবদুর রহমান  বলেন, আমার বাবা-দাদারা এখানে বসবাস করতেন। আমিও জন্ম থেকে এখানে বসবাস করছি। গতকাল সকাল থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন একেবারে ঘরের কাছে চলে এসেছে। এ কারণে কয়েকটি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইটও তুলে নিয়েছি। রাস্তার ওপর রেখে দিয়েছি। এখন কোথায় যাব, সেই চিন্তা করছি। কারণ, আমি সীমিত আয়ের মানুষ। অন্য কোনো স্থানে আমার কোনো জমিজমা নেই। ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করার মতো অবস্থা নেই। তবে গতকাল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বস্তা ফেলা হলে ভাঙন হয়তো রোধ করা সম্ভব হতো।

ধুঞ্চি গ্রামের আরেক বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন  জানিয়েছেন, এখানে ১২টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। পাশেই রয়েছে মসজিদ, সরকারি স্কুল, দোকানপাট বাজার। আতঙ্কে সবাই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। রাতে কেউ ঘুমাতে পারেনি। ডাকাতের ভয়ের চেয়ে নদী ভাঙনের ভয় আরও বেশি। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এসব বাড়িঘর রক্ষা পেত। এতগুলো পরিবারকে অসহায়ের মতো থাকতে হতো না। অনেকেই সবকিছু হারিয়ে কান্নাকাটি করছে।

শাহীন দেওয়ান  বলেন, আমি এসেছি পাকা বাড়ি ভাঙতে। গাছপালা কাটা হচ্ছে। যদি ভাঙন কমে যায়, তাহলে আর বাড়ি ভাঙা হবে না। কারণ, নদীতে বাড়ি চলে যাওয়ার চেয়ে ভাঙলে কিছু হলেও উপকার হয়।

এ বিষয়ে পাউবো রাজবাড়ী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল আহাদ বলেন, নদীর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন বার সার্ভে করা হয়েছে। তিন বারই নদীর গতি পথ ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল হচ্ছে। ভাঙন রোধের জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।