পরিত্যক্ত জলাশয়ে আয় পৌনে পাঁচ কোটি টাকা

ফানাম নিউজ
  ২৮ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৪২

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পানিফল চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এ বছর পরিত্যক্ত জলাশয়ে প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকার পানিফল চাষ হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় ৫-৬শ নারী-পুরুষ পানিফল ক্রয়-বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বিভিন্ন এলাকায় পানিফল শুকিয়ে আটা তৈরি করে রুটিসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার বানানো হচ্ছে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় পরিত্যক্ত জলাবদ্ধ পানিতে এ বছর প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পানিফল চাষ হয়েছে। পানিফল বিক্রি করে কৃষকরা ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।

কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে কৃষকের হাতে নগদ অর্থ কম থাকায় অসময়ে পানিফল বিক্রি করে যে নগদ অর্থ হাতে পান কৃষক তাতেই খুশি। পানিফল এখন অর্থকরী ফসলের রূপ নিয়েছে।

পানিতে ভাসমান গাছে জন্মায় বলে নাম হয়েছে পানিফল। স্থানীয়ভাবে সিঙ্গারা নামে পরিচিত। দেখতে খাবারের দোকানে ভাজা সিঙ্গারার মতো, তাই সিঙ্গারা হিসাবে ফলটির নাম ব্যাপক পরিচিত রয়েছে। গাঢ় সবুজ ও খয়েরি রংয়ের এ ফলটি খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়। ভিতরের শাঁস দুধের মত সাদা, খেতে খুবই সুস্বাদু, কোমল ঠাণ্ডা।

এলাকার সাধারণ মানুষ সিঙ্গারা সিদ্ধ করে সকালের নাস্তা হিসাবে খায়। পাকা সিঙ্গারা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিঙ্গারা রোদে শুকিয়ে মেশিনে অথবা ঢেঁকিতে পানিফলের আটা তৈরি করে রুটি বানিয়ে খাওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, সিঙ্গারা শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ রয়েছে। এ পানিফল দেশে প্রক্রিয়াজাত করে গ্লুকোজ তৈরি করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ফসল জন্মায় না এমন ধরনের পরিত্যক্ত ১০০ হেক্টর জমিতে পানিফল উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ২৪ টন। ৮০০ টাকা মণ দরে প্রতি টনের দাম ২০ হাজার টাকা হিসাবে মোট ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার পানিফলের চাষ হয়েছে। বর্তমানে কাঁচা সিঙ্গারা ৬-৭শ টাকা, পাকা সিঙ্গারা ৭-৮শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

পানিফল চাষি রং মিয়া জানান. তিনি ১৫ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ১ লাখ টাকার পানিফল বিক্রি করেছেন। আরও অনেক পানিফল রয়েছে।

চুকাইবাড়ীর বিশু জানান, তিনি পানিফল চাষ করে সংসারের অভাব ঘুচিয়ে পরিবারের স্বাবলম্বী হয়েছে। পানিফল চাষিরা সবাই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।

পানিফল চাষিরা জানান, দেওয়ানগঞ্জ তার আশপাশ এলাকায় হিমাগার না থাকায় সিঙ্গারা সংরক্ষণ করা যায় না। ২-৩ দিনের বেশি সিঙ্গারা থাকলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চৈত্রমাসে কাঁদা পানিতে সিঙ্গারার চারা রোপণ করতে হয়। বর্ষার জলাশয়গুলো পানিতে ভরে যায়। রোপণকৃত গাছগুলো বেড়ে যায়। কার্তিক মাস থেকে সিঙ্গারা তোলা শুরু হয়ে শেষ হয় পৌষ মাস পর্যন্ত। কিন্তু এ বছর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কার্তিক মাসেই পানিফল চাষ শেষ হয়ে যাবে।

প্রতিবছর দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনের পেছনে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কেনাবেচা হয় পানিফল। ঢাকা-ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী ও পুরুষ ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে। 

হাট ইজারাদার তোতা মিয়া জানান, রেলের লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় পানিফলের পাইকাররা আসতে পারছেন না। অতিরিক্ত খরচ করে বাধ্য হয়ে ট্রাকে বিভিন্ন স্থানে পানিফল নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র: যুগান্তর