শিরোনাম
দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশে এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৭ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ কমে এলেও কমছে না দুর্ঘটনা। সড়কের মিরসরাই অংশের ২৯ কিলোমিটারে দু-একদিনের ব্যবধানে কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও মাঝে মধ্যে ঘটে দুর্ঘটনা।
পথচারীদের অসচেতনতা, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো, সড়ক ঘেঁষে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, ওভারটেকিং, অবৈধ পার্কিং, পথচারী ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। উপজেলার বড়দারোগাহাট থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত বিভিন্ন ফিলিং স্টেশন, রেস্তোরাঁ ও কয়েকটি শিল্পকারখানার সামনে সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৯ ডিসেম্বর মহাসড়কের নয়দুয়ারিয়া এলাকায় এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার লরি চাপায় মুক্তার আহম্মদ (৯৯) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন। তার আগে ২১ ডিসেম্বর বালুবোঝাই দ্রুতগামী পিকআপের ধাক্কায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী হাসান আল বান্না (১৮) নামের এক কলেজছাত্র। ৬ ডিসেম্বর ঠাকুরদীঘি এলাকায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ফিরোজা বেগম (৫৪) নামের এক নারী নিহত হন। ২৮ নভেম্বর টিসিবির পণ্য আনতে যাওয়ার পথে লরি ধাক্কায় নিহত হন কৃষক আবুল কালাম প্রকাশ গুন্নি (৬৫)।
গত ৪ নভেম্বর উপজেলার কমলদহ ইউটার্নে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল আরোহী তিন স্কুলছাত্র প্রাণ হারান। তাদের সবার বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছর। এসময় এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। তাদের কারো মাথায় হেলমেট ছিল না।
১৪ নভেম্বর উপজেলার সুফিয়া রোড় এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি বেকারির পণ্য বহন করা ভ্যান ও একটি পিকআপকে একটি দ্রুতগামী কাভার্ডভ্যান চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হন। ১১ নভেম্বর বড়দারোগাহাট এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে অপর একটি ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন চালকের সহকারী।
গত ২৬ অক্টোবর বড়কমলদহ এলাকায় পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় দ্রুতগামী লরির ধাক্কায় তানজিনা আক্তার (১৫) নামের এক মাদরাসাছাত্রী নিহত হয়। ০১১ নভেম্বর বিকেলে মহাসড়কের কমলদহ এলাকায় চিটাগাং ফিড মিলের উত্তর পাশে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন বাসু দেব (৩৬) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী।
১৬ নভেম্বর রাতে মিরসরাই পৌর সদরে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে চার যাত্রী ও দুই পথচারী আহত হন। ১৭ নভেম্বর রাতে মিঠাছরা মুছিপোল এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হন অন্তত ১০ যাত্রী। ১৮ নভেম্বর বাদামতলী এলাকায় স্টার লাইন পরিবহনের একটি বাস পিকআপকে ধাক্কা দিলে দুজন আহত হন।
মিরসরাই মাতৃকা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জামশেদ আলম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইদানীং আরও বেড়ে গেছে। পথচারীদের অসচেতনতা, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো, সড়ক ঘেঁষে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা, ওভারটেকিং, অবৈধ পার্কিং, পথচারী ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি।
উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে বারইয়ারহাট পৌরবাজার, সোনাপাহাড়, ঠাকুরদীঘি, মিঠাছড়া ইউটার্ন, মিরসরাই ফিলিং স্টেশন, বড়তাকিয়া ইউটার্ন ও নিজামপুর কলেজ এলাকায়।
সম্প্রতি মহাসড়কের বড়তাকিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রামমুখী লেনে সড়কের ওপর বাস, লেগুনা পার্কিং ও যানবাহন থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এরমধ্যেই পথচারীরা যে যারমতো করে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন।
উপজেলার বারইয়ারহাট, মিরসরাই সদর ও নিজামপুর এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও মানুষ তা ব্যবহার না করে বিভাজকের ওপর দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন ঝুঁকি নিয়ে। অনেক সময় এতে দুর্ঘটনা ঘটছে।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, সব সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেবল যেসব সড়কে দুর্ঘটনার পর আমরা উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়, সেগুলোরই তথ্য নথিভুক্ত করে ফায়ার সার্ভিস। এ তথ্যের বাইরেও অনেক দুর্ঘটনা, হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেগুলোর আমরা হিসেব রাখি না।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল সরকার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। ফিটনেস ছাড়া যানবাহন চলাচল, অবৈধ পার্কিংসহ বিভিন্ন অপরাধে গত এক মাসেই জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। এর বাইরে চালক ও পথচারীদের সচেতনতা তৈরিরও চেষ্টা চলছে।
তবে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পথচারীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান ওসি। তিনি বলেন, পথচারীরা সচেতন হলে দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে।