শিরোনাম
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন কামরুন্নাহার শিমুল। শিমুল দলীয় কোনো পদে না থাকলেও ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী।
গত ৭ অক্টোবর রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পান শিমুল। তারপর ৯ অক্টোবর জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী ক্যাশিয়ার পদে ২৬ বছরের চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার অব্যাহতিপত্রও গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ করে দুই দিন পর সোমবার (১১ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির এপ্লবকে দেওয়া হয় মনোনয়ন। এপ্লব ২০১৬ সালে রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। চলতি বছরের ১১ মার্চ আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন তিনি।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর, সোনামুখী, গোপীপনাথপুর, তিলকপুর ও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন বর্তমান রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির এপ্লব, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরি অবসরের স্ত্রী কামরুন নাহার শিমুল।
কামরুন্নাহার শিমুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েই নৌকা দিয়েছিলেন রুকিন্দীপুর ইউনিয়নবাসীর সেবা করার জন্য। আমি ১৯৮৭ সালে জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার শ্বশুর সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, আমার স্বামী আওয়ামী লীগের বড় পদে রয়েছেন। আমি সারাজীবনই আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছি। কিন্তু চাকরির জন্য পদ নেওয়া হয়নি। মনোনয়নের জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। পুনরায় মনোনয়ন পেলে উপকৃত হতাম। ইউনিয়নের বেশিরভাগ ভোটার আমার সমর্থক। মনোনয়নবঞ্চিতরা কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে আমার মনোনয়ন বাতিল করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত করলে সব জানা যাবে।
এ বিষয়ে রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজারুল আনোয়ার লিটনসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জানান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরি অবসরের বিরুদ্ধে দেশের অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসার অভিযোগসহ দুদকের একাধিক মামলা রয়েছে। অবসরের সহধর্মিনী কামরুন নাহার শিমুল আওয়ামী লীগের সদস্য না হয়েও মনোনয়ন পেয়েছিলেন। একজন বিতর্কিত নেতার স্ত্রী হয়েও কীভাবে মনোনয়ন পান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। মনোনয়ন পরিবর্তন করায় দলের প্রধানকে ধন্যবাদ জানান তারা।
রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাফিজার রহমান বলেন, কামরুন নাহার শিমুল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সহকারী ক্যাশিয়ার পদে ২৬ বছর চাকরি করেছেন। এলাকার মানুষের পাশে তিনি ছিলেন না। আর তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। পরে পরিবর্তন করে এমন একজনকে দেওয়া হয়েছে যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন।
রুকিন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির এপ্লব বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সম্মানীর টাকা গরিব, দুস্থ মানুষের মাঝে দিয়েছি। গ্রামের সড়কসহগুলো ছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি। আমার পরিবারের সবাই দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী জরিপ করে মনোনয়ন পরিবর্তন করে আমাকে দিয়েছেন। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহতালার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
শিমুলের প্রসঙ্গে এপ্লব বলেন, শিমুল মূল দলসহ অঙ্গ সংগঠনের দলীয় কোনো সদস্যই ছিলেন না। তবে তার চাকরি যাওয়ায় আমি মর্মাহত। অবশ্য তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন, এজন্য অবসরভাতার সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মোকছেদ আলী বলেন, দল যাকে ভালো মনে করবে, তাকেই মনোনয়ন দেবে।
জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী প্রথমে কামরুন্নাহারকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। পরে পরিবর্তন করে আহসান কবির এপ্লবকে দিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যখন যে সিদ্ধান্ত আসবে তা মেনে নিতে হবে এবং দলের সকলকে তা মেনে নেওয়ার অনুরোধ করছি।
দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর আক্কেলপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সূদীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্র: জাগো নিউজ