শিরোনাম
নেত্রকোনায় বন্যার আশঙ্কা
সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ৯ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই ৯ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি বিজয়পুর পয়েন্ট ও কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কলমাকান্দা সদরের কলেজরোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। অন্যান্য এলাকায়ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
ঈদের দুদিন আগে থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার রাত পর্যন্ত হাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, জগন্নাথপুরসহ ৯ উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে এসব উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ ও বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ৯ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মোকামবাড়ি থেকে শক্তিয়ারখলা ১০০ কিলোমিটার ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৩কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জেলা সদরের সঙ্গে দুই উপজেলার সড়ক যোযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। ৩কিলোমিটার সড়ক ডুবে যাওয়ায় বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোটছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে মোটরসাইকেল ও সিএনজি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৪৫ মিমি এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ১৩১ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র ২৮ সেমি নিচ দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছিল।
ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার ৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৪টি পয়েন্টে পানি কিছুটা বেড়েছে এবং ২টি পয়েন্টে পানি সামান্য কমেছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে- ২৮ জুন সুনামগঞ্জে ৭২ মিমি, ২৯ জুন ১১৭ মিমি, ৩০ জুন ১৪৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাউবোর হিসাব অনুযায়ী গত এক মাসে (জুন) সুনামগঞ্জে মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩১৬ মি মি যা সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছাতক পয়েন্টে পানি বেড়েছে ০.১৭ সেন্টিমিটার। বর্তমানে বিপদসীমার ০.৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে অর্থাৎ ৮.৫৭ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে সুরমার পানি।
সুনামগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার শূন্য দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে অর্থাৎ ৭ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দিরাই উপজেলার পুরাতন সুরমা নদীর পানি শূন্য দশমিক ০.০৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার নিচে। তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পানি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার ১ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এছাড়াও জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর পানি শূন্য দশমিক ০১ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এবং তাহিরপুর উপজেলার পাঠলাই নদীর পানি শূন্য দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৗশলী-১ মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১০৭ মিলিমিটার, ছাতকে ১৮৩ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ১৪৫ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এছাড়াও জেলার সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি: জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় ৩/৪ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি বিজয়পুর পয়েন্ট ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কলমাকান্দা সদরের কলেজরোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও জেলার কংশ ও ধনু নদসহ বিভিন্ন নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সেগুলোতে বিপদসীমা অতিক্রম হয়নি।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সোমেশ্বরীতে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং উব্দাখালীতে ০.১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কংস নদীতে বিপদসীমার ১.১৮ সেন্টিমিটার ও খালিয়াজুরী উপজেলার খালিয়াজুরী বাজারের পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ০.৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নেত্রকোনা জেলার কতিপয় নিন্মাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমি সারা জেলায় নজর রাখছি, আমার টিম মাঠে কাজ করছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উপজেলাবাসীর যেকোনো ধরনের সমস্যায় তাৎক্ষণিকভাবে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিব।