শিরোনাম
উজানের ঢলে গাইবান্ধায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি বেড়েছে। তবে কোনো নদীর পানিই বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুরু হয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, পারদিয়া ও কুন্দেরপাড়া গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে অন্তত ২০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছেন।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবগুলো নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপিরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের তীব্রতায় ইতোমধ্যে দুটি চরের ২১টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অপরদিকে সুনামগঞ্জ জেলায় হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে প্রচন্ড রোদ ওঠায় হাওড়বাসীর মনে বন্যা আতঙ্ক কেটে গিয়ে আশার আলো জেগেছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদেও পাঠানো রিপোর্ট-
গাইবান্ধা : উজানের ঢলে গাইবান্ধায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে চব্বিশ ঘণ্টায় তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার কমেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ পরিমাণ পানি বৃদ্ধিও কমেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৬৫ টি চরের নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকায় পানি উঠেছে।
সকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে কোনো নদীর পানিই বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তিনি বলেন, শুক্রবার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ঘাঘট বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার, তিস্তা ৯১ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি বিপদসীমার ৪২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুরু হয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি, পারদিয়া ও কুন্দেরপাড়া গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে অন্তত ২০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছেন।
কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান বলেন, এসব পরিবার ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে বিভিন্ন বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ভাঙন রোধে কিছু এলাকায় নদীর তীরে জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। বাকি অংশেও ফেলা হবে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবগুলো নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপিরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের তীব্রতায় ইতোমধ্যে দুটি চরের ২১টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চরাঞ্চলে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন জেগে ওঠা চরের ঘরবাড়িগুলো ৫ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় নিদারুণ কষ্টে রয়েছে পরিবারগুলো। ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু স্থানে অবস্থান নেয়া অনেক পরিবার শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার পূর্ব বালাডোবা, কালির আলগা, মুসারচর ও সদর উপজেলার পোড়ার চরসহ ১০টি চরে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এই পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না।
এদিকে নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। চারনভূমি তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষজন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে কুড়িগ্রামের সবকটি নদনদীতে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার,ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পানি হ্রাস অব্যাহত ছিল।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গুজিমারির চরের আছোর উদ্দিন জানান, পানি ধীর গতিতে কমলেও স্রোতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। গুজিমারির চরের উত্তর অংশে এবং দক্ষিণ অংশে মোট ২১টি বাড়ি গত ৪ দিনের ব্যবধানে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব নদীভাঙা লোকজন হাতিয়া ইউনিয়নের চরবাগুয়ায় অবস্থান নিয়ে নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। এসব বন্যাকবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
এদিকে,সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার মমিন জানান, পানি হ্রাস পেলেও এখনো বাড়ির চারিদিকে পানি। আবার পানি বৃদ্ধি পায় কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি। পটলসহ সব সবজি ক্ষেত পানির নিচে। কিভাবে জীবন বাঁচাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তবে খুব দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। নগদ অর্থ শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজন সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ : ভারী বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওড়বাসীর মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়ে জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ বিভিন্ন উপজেলার নদনদী ও হাওড়ে পানিবৃদ্ধিসহ কিছু রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এছাড়াও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জে স্বল্পমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জেলায় বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে প্রচণ্ড রোদ উঠায় হাওড়বাসীর মনে বন্যা আতঙ্ক কেটে গিয়ে আশার আলো জেগেছে।
পৌর শহরের শাওন ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী শাওন আহমেদ বলেন, জেলাবাসী গত বছরের ১৬ জুন স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যার ভয়াবহতা এখনো ভুলতে পারেনি। এরমধ্যে নতুন করে জেলায় ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদী ও হাওড়ে পানি বৃদ্ধিসহ ছোটখাটো বন্যার পূর্বাভাসে হাওড়বাসীর মনে নতুন করে বন্যাতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। এতে করে হাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জে ঈদের বেচাকেনায়ও ভাটা পড়ার শঙ্কায় ছিল হাওড়বাসী। কিন্তু গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত না হয়ে প্রচন্ড রোদ উঠায় হাওড়বাসীর মনে জেগেছে আশার আলো।
মেলান্দহ (জামালপুর) থেকে : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে জামালপুরের মেলান্দহে বন্যার পানি বেড়ে ভরে গেছে নদনদী। এতে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন পাট চাষিরা। বন্যার আশঙ্কায় সময় হওয়ার আগেই বাধ্য হয়ে পাট কাটতে হচ্ছে তাদের।
সরজমিনে উপজেলার মাহমুদপুর ঘোষেরপাড়া, ঝাউগড়া, নাংলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর তীরবর্তী জমিতে পানি ঢুকছে। জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় পাট কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট কাটার সময় না হওয়ার আগেই বাধ্য হয়েই পাট কাটছে তারা।
মেলান্দহ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭০০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর। লক্ষ্য মাত্রা থেকে ৪০০ হেক্টর কম চাষ হয়েছে। উপজেলার ১ হাজার ৪০০ কৃষকের মাঝে সার ও পাটের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান বলেন,বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট শুক্রবার বেলা ১২টায় বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।