টাঙ্গাইলে ৩ লাখ একর জমির মালিক বলে দাবি করেছেন মুসা বিন শমসের

ফানাম নিউজ
  ১৩ অক্টোবর ২০২১, ১৪:২৯

কথিত ধনকুবের ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ৮২ বিলিয়ন ডলার সুইচ ব্যাংকে আটকে রয়েছে এমন তথ্য প্রকৃতপক্ষে ‘মুখরোচক গল্প’ বলে মন্তব্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ। তাঁকে ভুয়া লোক এবং অন্তসার শূন্য মনে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার।  

মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে মুসা বিন শমসেরকে সাড়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হারুন অর রশিদ। 

যুগ্ম কমিশনার হারুন অলেন, মুসা বিন শমসেরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দেওয়া আব্দুল কাদের একজন নবম শ্রেণি পাস ব্যক্তি। তাকে আপনার এতো বড় প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা কেন বানালেন? কাদের আপনাকে ১০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন, আপনি তাঁকে এক মাস পর আবার ২০ কোটি টাকার চেক দিলেন। তিনি এর উত্তরে বলেছেন, ১০ কোটি টাকার লাভ দিয়েছেন। তখন আমরা প্রশ্ন করলাম, এক মাসে ১০ কোটি টাকার লাভ ১০ কোটি হয় কীভাবে? তিনি জবাব দিতে পারলেন না। কিন্তু এখানে তাঁদের উদ্দেশ্য কী ছিল জানি না। 

৮২ মিলিয়ন ডলারের মালিক মুসা বিন শমসের, এই তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ডিবিকে বলেন, হ্যাঁ, ঘটনা সত্য। আমার সুইচ ব্যাংকে এই টাকা জমা আছে। তখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় সেই ডলারের কাগজপত্র কাদেরের কাছে কেন? এর কোনো জবাব দিতে পারেননি তিনি। 

ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, তিনি আমাদের সামনে বলেছেন, তাঁর একটি কলমের দাম ১০ কোটি টাকা, ঘড়ির দাম ৮ কোটি টাকা, জুতার দাম ১০ কোটি টাকা। টাঙ্গাইলে ৩ লাখ একর জমির মালিক, গাজীপুরে ১ হাজার একর জমির মালিক। তিনি কথাগুলো শিশুসুলভ ভাবে হয়তো বলেন। কিন্তু কাদের এই কথাগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছেন, আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

এমনকি জিজ্ঞাসাবাদে মুসা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের বলেছেন, ৮২ বিলিয়ন ডলার সুইচ ব্যাংক থেকে আনতে পারলে পুলিশকে দিবেন ৫০০ কোটি টাকা, ২০০ কোটি টাকা দিয়ে দুদকের ভবন করে দিবেন, পাবনার মানসিক হাসপাতালকে দিবেন ৫০০ কোটি টাকা, ঠ্যাংগামারা মহিলা সমিতিকে দিবেন ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুও করে দিবেন। 

ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, আসলে তিনি কী টাইপের মানুষ আমরা বুঝিনি। তাঁকে রহস্যজনক মানুষ মনে হয়েছে। তাঁর সঙ্গে ভুয়া অতিরিক্ত সচিব কাদের মাঝির যে সম্পর্ক এই সম্পর্কের দায় তিনি এড়াতে পারবেন না। কারণ তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। 

হারুন রশীদ বলেন, তিনি (মুসা) বলেছেন, কাদেরের মাধ্যমে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। আমরা তদন্ত করছি। তিনি যদি মামলা করেন তাহলে সেই মামলাও আমরা তদন্ত করবো। 

মুসা বিন শমসের বিপুল সম্পদের মালিক বলে দাবি করেছেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে আপনারা কী পেয়েছেন, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, তাঁকে আমাদের কাছে ভুয়া লোক এবং অন্তসার শূন্য মনে হয়েছে। বাস্তবে তাঁর কিছু নেই। তাঁর একটি বাড়ি রয়েছে সেটিও তাঁর স্ত্রীর নামে। বাংলাদেশে তাঁর কোনো সম্পদ পাওয়া যায়নি। তবে তিনি তাঁর সম্পদের বিষয়ে যা বলেছেন সেগুলো মুখরোচক গল্প মনে হয়েছে। 

এই দেশে যা উন্নয়ন হয়েছে সব তাঁর টাকায় হয়েছে, সব উন্নয়নের মালিক তিনি-এমন দাবিও করেছেন মুসা বিন শমসের। 

মুসা বীন শমসেরকে মানসিক ভাবে অসুস্থ মনে হয়েছে কি-না জানতে চাইলে ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, আমার মনে হয়েছে তিনি খামখেয়ালি ভাবে এই কথাগুলো বলেছেন। তিনি এগুলো বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। আর এই কথাগুলো কাদের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছেন।  

মুসা বিন শমসেরকে অতীতে বডিগার্ডসহ প্রটোকল নিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। কিন্তু আজ অনেকটা নীরবে একাই এসেছেন। এর কারণ জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, আগে থেকে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছে। বডিগার্ড নিয়ে আসা যাবে না। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। আর এতো লোকজন পালার মতো সামর্থ্যও তাঁর নেই। তাঁর আর্থিক অবস্থা নেই। আগেই বলেছি তিনি, অন্তাসার শূন্য। সূত্র: আজকের পত্রিকা