শিরোনাম
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের মধ্য গুলি আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল হাওলাদার। পেশায় জেলে হওয়ায় শুক্রবার বড় ছেলের বৌ নিয়ে নিজের মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে চর শাহজালাল থেকে ফিরছিলেন। তবে হঠাৎ মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ঝড়ে নৌকায় থাকা ১৫ যাত্রীসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ১৫ যাত্রীর মধ্যে ১০ জন উদ্ধার হলেও তখন একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। এ ঘটনা এখনো দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন দেড় বছর বয়সী রাতুল। বাবা মনিরুল হাওলাদার ক্লান্ত হয়ে সন্তানকে মাঝনদীতে ছেড়ে দিলেও তার দাঁড়ি ও জামা ধরেই বেঁচে ফিরেছে সে।
সরেজমিনে মনিরুলের বাড়িতে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে শোকের আবহ বিরাজ করছে। দেড় বছরের শিশু সন্তান রাতুলকে কোলে নিয়ে এক পলক দৃষ্টিতে বসে আছেন তিনি। সবাই নিশ্চুপ, ঠিক যেন পিনপতন নীরবতা।
মনিরুল হাওলাদার বলেন, জুমার নামাজের পর আমরা বেয়াই বাড়ি থেকে রওনা করি। আমরা বুড়াগৌড়াঙ্গ নদীতে পৌঁছার ১০ মিনিট পর হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তুফানে ট্রলারের দুই পাশ দিয়ে পানি উঠতে থাকে। আস্তে আস্তে ট্রলারটি পানিতে ভরে যায়।
তিনি বলেন, তখনও ট্রলারটি পুরোপুরি ডুবে নাই। আমরা চিৎকার দিতে থাকি। একপর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে গেলে আমরা ভাইসা উঠি। একেক জন একেক দিকে ভেসে যায়। অনেকক্ষণ সাঁতার কাঁটার পর আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। আমার ছেলের দাদি শাশুড়ি আমাকে ধরতে চাইলে আমি ডুব দিয়ে সরে যাই। উঠে দেখি আমার স্ত্রী রাতুল তুলে দিয়ে বলে ‘বাচ্চাটা বাচাও’। আমি বাম হাত দিয়ে তাকে হাত ধরি। একটু পর দেখি আমার স্ত্রী পাশে নেই। সাঁতরিয়ে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি বাচ্চার হাত ছেড়ে দেই। দুই হাত দিয়ে সাঁতার কাটতে থাকি। রাতুল এক হাত দিয়ে আমার দাড়ি ও আরেক হাত দিয়ে জামার কলার ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর একটা নৌকা আইয়া আমারে ও আমার বাচ্চারে উদ্ধার করে। একে একে আমাগো ১০ জনেরে উদ্ধার করছে তারা।
মনিরুল হাওলাদার বলেন, আমার ট্রলারে ছেলে-মেয়ে সবাই ছিল। দুই ছেলে এক মেয়ে আমার। আজ আমার স্ত্রী সেলিনা বেগম ও বড় ছেলে রাব্বিরের মরদেহ পেয়েছি।
পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জানান, পটুয়াখালীর ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের সঙ্গে বরিশাল থেকে আসা ডুবুরি দলের সদস্যরাও কাজ করছে।
এরআগে ২৮ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেলে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ১৫ জন যাত্রীসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন।