শিরোনাম
শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাস্কর্য বানালেন সবুজ তজু নামে এক দিনমজুর। কাঠের ওপর কারুকাজ করে ভাস্কর্যটি বানিয়েছেন তিনি। এই ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও দূর-দূরান্তের মানুষজন। এটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চান এই দিনমজুর।
সবুজ তজু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের হরিণছড়া চা-বাগানের গারো সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। এক যুগের বেশি সময় ধরে ভাস্কর্য ও বহুমাত্রিক শিল্পকর্ম তৈরি করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে কাঠ দিয়ে মাছ ধরা, চা-পাতা তোলা, ঘাস কাটা, পান চাষ, ডিম থেকে পাখির বাচ্চা বের হওয়া, জেবরা, গন্ডার, হরিণ, চা-কন্যা, বঙ্গবন্ধু, লোকনাথ ব্রহ্মচারী ও মা-মারিয়ার মূর্তিসহ ছোটবড় নানা ভাস্কর্য তৈরি করছেন সবুজ। সংসারের চাপে এসব কাজ সবসময় করতে পারেন না। তবে মাঝেমধ্যে করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সবুজের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায়। তার বাবা হরিণছড়া চা-বাগানে চাকরি করতেন, বর্তমানে অবসরে আছেন। হালুয়াঘাটে থেকে শিল্পকর্ম চালিয়ে আসছিলেন সবুজ। কিন্তু করোনার কারণে শিল্পকর্ম বিক্রি সীমিত হয়ে পড়ে। এর আয় দিয়ে সংসার চলছিল না। এ অবস্থায় প্রায় দুই বছর আগে হরিণছড়া চা-বাগান এলাকায় চলে আসেন। এরপর থেকে দিনমজুরির কাজ করছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে গির্জায় ধর্মের কাজে নিয়োজিত। ছোট ছেলে হলিক্রস কলেজে এবং মেয়ে ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করেন।
সবুজ তজু বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে পারদর্শী ছিলাম। এরপর গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্মারক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিল্পকর্ম শুরু করি। কিন্তু করোনার মধ্যে কাজ ও বেচাকেনা কমে যায়। এতে বেকায়দায় পড়ে চা-বাগানে চলে আসি। এখানে ভাঙাচোরা ঘরে থাকতাম। সম্প্রতি আমাদের একটি ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তাকে কিছু একটা উপহার দেওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে ভাস্কর্য তৈরির কথা।’
তিনি বলেন, ‘দুই মাস একটি গাছ খোদাই করে ৪৩ ইঞ্চি লম্বা প্রধানমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ভাস্কর্যটি তৈরি করেছি। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ব নেতৃত্বের ছাপ ভাস্কর্যটিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার প্রতীক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মুখমণ্ডল আলোকিত করা হয়েছে। এখন ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। তবেই পরিশ্রম সার্থক হবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সবুজ তজুর শিল্পকর্মের দক্ষতা আমার চোখে পড়ে। তার হাতের তৈরি অনেক ভাস্কর্য দেখে ভালো লেগেছে। সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাস্কর্য তৈরি করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।’
লাখাইছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা তপন বৈদ্য বলেন, ‘ভাস্কর্যটি হুবহু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো। আমার গ্রাম থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে হরিণছড়া চা-বাগান। তার বাড়িতে গিয়ে দেখেছি, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীরা ভাস্কর্য এবং শিল্পকর্ম দেখার জন্য ভিড় করেছেন।’
সবুজ তজুর স্ত্রী পূরবী রিচিল বলেন, ‘আমার স্বামী চা-বাগানে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কখনও কখনও মানুষের ঘরে রংয়ের কাজ করেন। আবার লেবু বাগানে দিনমজুরের কাজ করেন। ভাঙা ঘরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলাম। ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় আমাদের পাকা ঘর উপহার দিয়েছে সরকার। ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে কিছু উপহার দেওয়া যায় কিনা-এমন ভাবনা থেকে ভাস্কর্যটি বানিয়েছেন স্বামী। এই ছোট উপহার প্রধানমন্ত্রীকে দিতে চাই আমরা।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ বলেন, ‘সবুজ তজুর হাতের কাজ অসাধারণ। তিনি হতদরিদ্র মানুষ। থাকার ব্যবস্থা না থাকায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে।’
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওই দিনমজুর মনেপ্রাণে ভালোবাসেন—এই ভাস্কর্য তারই নিদর্শন। ভাস্কর্যটিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিচ্ছবি পুরোপুরি ফুটে উঠেছে। এতে বোঝা যায়, ভাস্কর্য তৈরিতে ভালোবাসার কমতি ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।’