শিরোনাম
কৃষক পরিবারের সন্তান ২৫ বছরের মিজানুর রহমান। মাস দুয়েক আগে আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাকে নেয়া হয়েছিল ভারতে। সেখানকার হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল তার লিভারের ৮০ ভাগ অকেজো।
তাকে বাঁচাতে হলে করতে হবে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন (প্রতিস্থাপন)। তাও যত দ্রুত সম্ভব। এতে শুধু অপারেশনেই ব্যয় হবে অর্ধকোটি টাকা। আর লিভার সংগ্রহ করতে হবে নিজেদেরই।
টাকার চিন্তায় মিজানুরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা হয়ে পড়েন দিশেহারা। এমন সময় আশা জাগালেন মিজানুরের ভাবি তিথি। দেবরকে বাঁচাতে নিজের লিভার (কিছু অংশ) দিবেন বলে জানান তিনি। এতে শঙ্কা কাটে লিভারের। তবে অপারেশনের টাকার ব্যবস্থা হবে কীভাবে? টাকার অভাবে দিন দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মিজানুর। বাঁচতে চান সেই মিজানুর। তার পরিবার সাহায্য চায় সবার কাছে।
মিজানুর বগুড়ার গাবতলী উপজেলার জয়ভোগা দিঘাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম নূরুল ইসলাম। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়ে সেখানকার রিলা হাসপাতালে পরীক্ষা শেষে জানতে পারেন তার লিভারের ৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।
রানার প্লাজা নামের বগুড়া শহরের একটি শপিংমলে মোবাইলের শোরুম আছে মিজানুরের। একই দোকানে তার বড় ভাই মোক্তার হোসেন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। এই দুই ভাইয়ের একই ব্যবসা। বছর দেড়েক আগেই বিয়ে করেন মিজানুর। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন নতুন জীবনের। কিন্তু তার সেই স্বপ্নের পথ এখন কাঁটায় ঘেরা।
চলতি বছরের গত জুলাই মাসের শেষের দিকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন মিজানুর। এরপর চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে জানতে পারেন তার লিভারের সমস্যার বিষয়টি। সবমিলে এখন পর্যন্ত তার চিকিৎসায় খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। নিজ পরিবার ও স্বজনদের সহায়তায় নিয়ে এ খরচ বহন করা হয়। কিন্তু এখন তার পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা খরচ বহন করা আর সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মিজানুরের ভাই মোক্তার হোসেন। তবে এরমধ্যেই আশার আলো জ্বালান মিজানুরের ভাবি (মোক্তারের স্ত্রী) ২৬ বছরের নাজনীন হীরা তিথি। দেবরের প্রাণ বাঁচাতে দিতে চেয়েছেন নিজের লিভার।
মিজানুরের ভাই মোক্তার হোসেন ব্যবসার সুবাদে বগুড়ার শহরের রহমান নগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী মিজানুরকে লিভার দিতে চেয়েছেন। এতে লিভারের ব্যবস্থা হলেও চিকিৎসায় লাগবে আরো ৫০ লাখ টাকা। খুব দ্রুত এই টাকা সংগ্রহ করতে না পারলে আমার ভাইকে বাঁচানো যাবে না। ভারতেই আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে হবে। খুব দ্রুত অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। মিজানুর এখন বাড়িতেই রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তিথি নিজ ইচ্ছায় মিজানুরকে লিভার দিতে চেয়েছেন।
জানতে চাইলে তিথি বলেন, আমি নিজ ইচ্ছায় দেবরকে বাঁচাতে লিভার দিবো। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়েই আমি বাঁচতে চাই। সবজেনে বুঝেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু বলেন, সুস্থ ও জীবিত দাতার লিভারের একটা অংশ নিয়ে গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। দুই-তিন মাসের মধ্যেই দাতা ও গ্রহীতার লিভারের অংশগুলো বেড়ে স্বাভাবিক আকৃতি পেয়ে যায়।