শিরোনাম
চোখের জলে বজ্রপাতে নিহতদের শেষ বিদায় জানাল উল্লাপাড়ার হাজারো মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বজ্রপাতে উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের মাঠে একটি শ্যালো মেশিন ঘরের মধ্যে নিহত হন ৯ জন। আহত হন আরও ৪ জন।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মাটিকোড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের নিহত আব্দুল কুদ্দুস, শাহ আলম, রিতু খাতুন ও জান্নাতী নদীকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। পাশাপাশি একই সময় শিবপুর গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় কৃষি শ্রমিক শমসের আলীসহ তার পরিবারের সদস্য আফসার আলী, শাহিন, মোবাক্ষর ও মোন্নাফ আলীকে। এ সময় উভয় গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বৃহস্পতিবারের বজ্রপাতের ঘটনার আগে নিহত ও আহতরা সবাই মাঠে রোপা ধানের চারা রোপনের কাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই শুরু হয় বৃষ্টি। দৌড়ে গিয়ে সবাই আশ্রয়ের জন্য মাঠে অবস্থিত একটি শ্যালো মেশিন ঘরে গিয়ে ওঠেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বজ্রপাতে মর্মান্তিক ভাবে মৃত্যু হয় ৯ নারী-পুরুষের। উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে উল্লাপাড়া ৩০ শয্যা হাসপাতাল ও সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনায় গোটা উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
শুক্রবার সকালে মাঠিকোড়া গ্রামের আব্দুল আলীমের বাড়িতে গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার স্ত্রী আছিয়া খাতুন। গতকালের ঘটনায় এই দম্পতির মেয়ে রিতু খাতুন মারা গেছে। মেয়ের এই অকাল মৃত্যু মা আছিয়া খাতুন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। বার বার প্রলাপ বকতে গিয়ে তিনি একই কথা বলছিলেন, 'আমার রিতুরে আইনা দাও, তারে ছাড়া আমি বাচুম না।' প্রতিবেশীরা বার বার তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও থামানো যাচ্ছে আছিয়ার কান্না।
একই অবস্থা ওই গ্রামের স্বজন হারানো গোলাম মোস্তফা ও রোজিনা খাতুন দম্পতিরও। নদীর মৃত্যুতে শোকবিহল পরিবার একেবারেই মুষড়ে পড়েছেন। তাদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা কারো জানা নেই।
উপজেলার শিবপুর গ্রামে শমসের আলীর পরিবারের ৫ জন এই ঘটনায় মারা গেছেন। শুক্রবার বেলা ১০ টায় শমসের আলীর বাড়িতে গেলে তার শোকবিহল স্ত্রী শান্তি খাতুন সবাইকে একই কথা বলছিলেন পরিবারের উপার্জনের লোক ছিল তার স্বামী শমসের আলী ও সন্তান শাহীন। দুজনই চলে গেছেন। এখন হতাশার অন্ধকারে তিনি। কীভাবে তার সংসার চলবে এটাই তিনি বারবার প্রশ্ন করছিলেন স্বজন এবং প্রতিবেশীদেরকে।
শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান হোসেন জানান, তিনি বজ্রপাতে নিহত শমসের আলীর নিকট প্রতিবেশী। তাদের এই চরম বিপদে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই গ্রামবাসীর। আমরা সবাই বাকরুদ্ধ। পরিবারটি এখন পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ায় চরম দুর্দিন নেমে এলো।
এদিকে এই দুর্ঘটনার পর উল্লাপাড়ার সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম নিহতদের পরিবারের কাছে গিয়ে সমবেদনা জানান। সেই সঙ্গে পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন জানান, বজ্রপাতে নিহত প্রতিটি পরিবারকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মাদ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ টাকা পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে।
উল্লাপাড়া পৌরসভার মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে শিবপুর গ্রামের (পৌরসভার অন্তর্গত) শমসের আলীর বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নজরুল ইসলাম জানান, এই পরিবারের উপার্জনের লোক না থাকায় তিনি সদস্যদের বিভিন্ন ভাতার কার্ড প্রদানসহ পৌরসভা থেকে সহায়তা দেবেন।
উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে প্রবীন শিক্ষাবিদ পঞ্চক্রোশী আলী আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক হাবিবুজ্জামান বলে, বিগত ষাট বছরে বজ্রপাতে উল্লাপাড়ায় একসঙ্গে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। চরম বিপদে যে মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য শ্যালো মেশিনের ঘরে উঠেছিলেন, ভাগ্যের নিমর্মতায় সেখানেই বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হলো। এই ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।