শিরোনাম
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রুটে আবার ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর ফলে আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে মীরসরাইয়ের চিনকি আস্তানা, বড়তাকিয়া ও সীতাকুণ্ড উপজেলার কয়েকটি স্টেশন। রেলওয়ে সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আবার ডেমু ট্রেন চালু হবে-এ খবর শুনে খুশি এসব এলাকার মানুষ।
২০১৩ সালে কুমিলা থেকে চট্টগ্রামে ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এই ট্রেন কুমিলা থেকে চিনকি আস্তানা পৌঁছাত সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। বড়তাকিয়া স্টেশন পৌঁছাত ৭টা ২০ মিনিটে। সাড়ে ৮টা নাগাদ পৌঁছাত চট্টগ্রাম শহরে। বিকাল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে বড়তাকিয়া পৌঁছাত সন্ধ্যা ৬টায়। চিনকি আস্তানা পৌঁছাত ৭টা ১৫ মিনিটে। মীরসরাই অঞ্চলের অনেকেই এই ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রামে অফিস করতেন। সাত বছর ধরে নিয়মিত চলাচলের পর ২০১৭ সালের দিকে ট্রেনটি অচল হয়ে যায়। এর আগে ও পরে অন্যান্য রুটের ১৩টি বিকল হয়। তবে চট্টগ্রাম-দোহাজারি রুটের খুব স্বল্প দৈর্ঘ্যে যাতায়াত করা ট্রেনটি বেশি দিন সচল ছিল।
ডেমু ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণকারীরা চিনকি আস্তানা স্টেশনের যাত্রী জাভেদ ভ‚ঞা বলেন, আমি একটি সরকারি অফিসে চাকরি করি। এই ট্রেনেই নিরাপদে চট্টগ্রামে যাতায়াত করতাম। ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এক দিকে বাড়তি খরচ, অপর দিকে পরিবার শহরে রাখতে গিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে।
জানতে চাইলে রেলওয়ের মীরসরাই উপজেলার চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই স্টেশন থেকে একসময় অনেক মানুষ ডেমু ট্রেনে যাতায়াত করত। কিন্তু চায়না প্রযুক্তি না পাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এখন আমাদের প্রকৌশলীরা চায়না প্রযুক্তির বিকল্প উদ্ভাবন করেছেন। তাই অচল হয়ে পড়া ট্রেন আবার চালানো সম্ভব হয়েছে। আশা করি এই রুটের ডেমু ট্রেনটি শিগগিরই চালু হবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এই বিষয়ে রেলওয়ের আঞ্চলিক উপসহকারী প্রকৌশলী রিটন চাকমা বলেন, এই ট্রেন চালু হলে আগের মতো আবার চিনকি আস্তানা, বড়তাকিয়া ও সীতাকুণ্ড উপজেলার কয়েকটি স্টেশন প্রাণ ফিরে পাবে।
জানা যায়, চায়না প্রযুক্তির বিকল্প উদ্ভাবন করে সচল করা হয়েছে অচল হওয়া ডেমু ট্রেনগুলো। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাই কঠিন এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। তারা ডেমু ট্রেনের খোলস রেখে পুরো অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তিই পালটে দিয়েছেন। এতে সাশ্রয় হয়েছে দেশের বিপুল অঙ্কের টাকা।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের কম দূরত্বে চলাচলের জন্য মূলত এই ডেমু ট্রেন ক্রয় করা হয়েছিল। চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি লিমিটেড থেকে ডেমুগুলো আমদানিতে খরচ হয়েছিল ৬৪৫ কোটি টাকা। ট্রেনগুলোর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০ বছর। সে হিসাবে ২০১৩ সালে আনা এসব ট্রেন ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চলার কথা। কিন্তু সাত বছরের মধ্যে ২০টি ডেমুর ১৩টিই বিকল হয়ে পড়ে। এগুলো ঠিক করতে উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠান ক্রয়মূল্যের কাছাকাছি অর্থ দাবি করে। এ কারণে ট্রেনগুলো মেরামত করা যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রেনগুলো সচল করতে আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এরপর তিনি ডেমু নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবের একটি কক্ষে বসে তিনি গবেষণা পরিচালনা করেন। ৭২ দিনের প্রচেষ্টায় তিনি উদ্ভাবন করেন বাস-ট্রাকের মতোই ডেমু চালানোর প্রযুক্তি। ব্যয়বহুল মডিউল হটিয়ে দেন তিনি। সে ক্ষেত্রে বসানো হয় মাত্র দুটি কন্ট্রোলার। আর চালু হয়ে যায় অচল ট্রেন।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ‘দেশে পাওয়া যায় সে রকম উপাদান দিয়ে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা ডেমু ট্রেনগুলো মোডিফাই করেছি। দেশের প্রকৌশলীরা চীনের প্রযুক্তি বাদ দিয়ে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিজেল ওয়ার্কশপে সচল করেছেন পাঁচটি ডেমু ট্রেন।’
চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম দোহাজারি, ঢাকা-টঙ্গী, ঢাকা- জয়দেবপুর, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, সিলেট-আখাউড়া, নোয়াখালী-লাকসাম, লাকসাম-চাঁদপুর, পাবর্তীপুর-লালমনিরহাট, পাবর্তীপুর-পঞ্চগড় রুটে চলাচল করত ট্রেনগুলো।